কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক: ভোলা জেলার ১৯ টি চরাঞ্চলে লবনাক্ত পানি থেকে মহিষ সুরক্ষায় ২০ টি গভীর নলকূপ ও ২০ টি পানির হাউজ স্থাপনের কাজ চলছে। মহিষের সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে ভোলা সদরে ১০ টি ও চরফ্যাসনে ৯ টি চরে এসব নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৩ আগস্ট চরফ্যাসনের চরগুলোতে নলকূপ ও হাউজ বসানোর কাজ শুরু হলেও সদরের চরাঞ্চলের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তালিকা প্রণোয়ন সম্পন্ন হলে এখানেও কাজ শুরু করা হবে।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় আগামী অক্টোবরের মধ্যে এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল বাসস’কে জানান, প্রতিটি নলকূপ ৮০ থেকে ৯০ ফুট গভীরতায় স্থাপন হচ্ছে এবং পানির হাউজের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট ধরা হয়েছে। সম্পূর্ণ কংক্রিটের ঢালাই সম্পন্ন এসব হাউজের গভীরতা থাকছে ৫ ফুট করে। নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তিকে এসব নলকূপ ও হাউজ পরিচালনা করার জন্য দায়িত্ব দেয়া থাকবে। এগুলো হয়ে গেলে মহিষের রোগ ও মৃত্যুর হার কমে গিয়ে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তিনি জানান, চরফ্যাসন উপজেলার চর হাসিনা, বয়রার চর, চর তাড়–য়া, চর মোতাহার, চর স্টিফেন, সিকদার চর, কুকরী-মুকরী, চর যমুনা ও চর পাতিলায় এসব হাউজ ও নলক’প বসছে। এর মধ্যে প্রত্যেক চরে একটি করে হলেও কুকরী-মুকরীতে ২টি হাউজ ও নলকুপ হচ্ছে।
প্রানি সম্পদ কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর এসব চরের মহিষ থেকে বিপুল পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়ে আসছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। কিন্তু এ চরগুলো ঝড়-জলোচ্ছাস এবং জোয়ারে প্লাবিত হয়। প্রায় ৪ মাস এসব এলাকায় লবনাক্ত পানি থাকে। লবনাক্ত পানির প্রভাবে এখানে প্রতি বছর কয়েক হাজার মহিষ ডায়রিয়া, চর্মরোগ, লোম ঝড়ে পড়া, দুর্বল হয়ে পড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
তারা আরো জানান, এতে দুধের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে লবনাক্ত পানির কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে মহিষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়েন খামারি এবং মহিষ পালকরা। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণেও লবনাক্ত পানিতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৯টি মহিষ। পরে অবশ্য প্রাণি সম্পদ বিভাগ এসব মহিষের চিকিৎসা দিয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল আরো বলেন, জেলায় এক লাখ ২৪ হাজার মহিষ রয়েছে। যা থেকে প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব দুধ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় চলে যায়। মহিষের দুধ জেলায় অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। তাই মহিষের উন্নয়নে কাজ করছে প্রাণি সম্পদ বিভাগ। চরাঞ্চলের মহিষ সুরক্ষায় জেলায় ৫০টি আধুনিক কিল্লা স্থাপনের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চরাঞ্চলে মহিষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করাতে খুশি হয়েছে এখানকার খামারিরা।
সূত্রঃ বাসস/ কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম