মোঃ আব্দুল আউয়াল : ফল আল্লাহর এক অপূর্ব নিয়ামত । দেশি ফল পুষ্টিতে ভরপুর। ফল গাছ কাঠ দেয়, ছায়া দেয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলের রয়েছে ভেষজ, ঔষধি গুণ। আমাদের দেশে প্রায় ৭০ ভাগ পুরুষ, ৭৩ ভাগ শিশু, ৭৫ ভাগ মহিলা রক্তাল্পতা রোগে ভোগে। এ পুষ্টি ঘাটতি পূরণে ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, সুস্থ সবল দেহের দৈনিক জনপ্রতি ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে বাহারি ফল জন্মে। দেশী ফল স্বাদে গন্ধেই নয় পুষ্টি বিচারে উৎকৃষ্ট। ফলে পুষ্টি উপাদান বেশি বিদেশি ফল আপেলে ভিটামিন-সি আছে খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ৩.৫ মিলিগ্রাম।
বাংলার আপেল বলে খ্যাত পেয়ারায় ভিটামিন-সি আছে ২১০ মিলিগ্রাম। পেয়ারায় আপেলের চেয়ে ৫০ গুণেরও বেশি ভিটামিন-সি আছে। আঙুরে খাদ্যশক্তি আছে ১৭ কিলোক্যালরি আর কুলে খাদ্যশক্তি আছে ১০৪ কিলোক্যালরি যা ৬ গুণেরও বেশি। আঙুরে ভিটামিন সি আছে ২৮.৫ মিলিগ্রাম, কুলে ভিটামিন সি আছে ৫১ মিলিগ্রাম অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। পাকা আমে ক্যারোটিন আছে ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম, পেঁপের মধ্যে আছে ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম, কাঁঠালে আছে ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম । সে তুলনায় আঙুর, আপেল, নাশপাতি, বেদানায় ক্যারোটিন আদৌ নেই। বিদেশি ফল মাল্টা ক্যারোটিন শূন্য অথচ দেশি কমলায় ক্যারোটিনের পরিমাণ ৩৬২ মাইক্রোগ্রাম ।
ভিটামিন-এ-র অভাবে শিশুদের রাতকানা, অন্ধত্ব রোগ দেখা দেয়। হলদে বা লালচে রঙিন ফল যেমন- পাকা আম, পাকা পেঁপে, পাকা কাঁঠাল ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। এ ক্যারোটিন প্রায় ৬ ভাগের এক ভাগ ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের শরীরে কাজে লাগে। তাই শিশুসহ সব বয়সী লোকদের উচিত দৈনিক বেশি করে ফল খাওয়ার অভ্যাস করা। ফল সরাসরি খাওয়া হয় বলে ভিটামিন-সি নষ্ট হয় না। ফল বিশেষ করে টক জাতীয় ফল ভিটামিন-সি এর রাজা। আমলকী ও বরই ভিটামিন-সি’বেশি । ভিটামিন-সি দৈনিক খেতে হয়। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন-সি থাকে ৪৬৩ মিলিগ্রাম আর বরইয়ে আছে ৪৬৩ মিলিগ্রাম। লেবুতে ৪৭ মাইক্রোগ্রাম, কমলা লেবুতে ৪০ মাইক্রোগ্রাম, বাতাবি লেবুতে ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, আমড়ায় ৯২ মাইক্রোগ্রাম, কামরাঙায়-৬১ মাইক্রোগ্রাম, জামে ৬০ মাইক্রোগ্রাম, জলপাইয়ে ৩৯ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যমান। ভাতের সঙ্গে একটু লেবুর রসেই ভিটামিন-সি’র চাহিদা পূরণ হতে পারে। গর্ভকালীন রক্ত স্বল্পতার কারণে প্রসব-উত্তর রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রে ফলের অবদান যথেষ্ট। বিশেষ করে কালো জাম, খেঁজুর, কাঁচকলা, পাকা তেঁতুল, তরমুজ লৌহ ঘাটতি পূরণে সহায়ক। ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় ডাবের বিশুদ্ধ পানি খুবই উপকারী। এতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাসের মতো পুষ্টিকর উপাদান। ডাবের পানি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী।
ভিটামিন-বি২ এর অভাবে মুখের কোণে ও ঠোঁটে ঘা হয়, ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়,নাকের দুইপাশে চর্মরোগ হয়, এ সব অভাব পূরণে কাঁঠাল, লটকন, ডেউয়া, আতা, শরীফা ও অন্যান্য ফল ভিটামিন-বি২ এর অভাব পূরণে সহায়ক। বাংলাদেশে প্রায় ১৩০ রকম ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মধ্যে প্রায় ৭০ রকম প্রচলিত ভাণ্ডার রয়েছে। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ-এই ৪ মাসে ৫৪% ফলের প্রাচুর্য দেখা যায়। বাকি ৮ মাসে পাওয়া যায় মাত্র ৪৬% ফল। আবার জ্যৈষ্ঠে অর্থাৎ মধুমাসে ১৪% ও আষাঢ় মাসে ১৭% ফল উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ মোট উৎপাদনের ৩১% ফল পাওয়া যায় এ দুইমাসে।
আমের জুস, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, চাটনি তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। আনারস টিনজাত করে রাখা যায়। পেয়ারার জ্যাম, জেলি, আমড়ার জেলি, তালের জ্যাম, জামের স্কোয়াশ, কুল থেকে আচার, চাটনি, পেঁপের জুস তৈরি করে সংরক্ষণ করলে পরবর্তীতে অমৌসুমে খাওয়া যায়। সারা বছর যাতে আম, লিচু, কাঁঠাল, কুল, আনারস ও অন্যান্য ফল পাওয়া যায় সেজন্য বারোমাসি জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা জোরদার করা দরকার। কলা, পেঁপে, নারিকেল সারা বছরই জন্মে। তাই এগুলোর আবাদ ব্যাপক সম্প্রসারণ করা দরকার।
আজকাল বসতবাড়িতে বনজ গাছ দেখা যায়। বনজ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। এগুলো ফলগাছের ওপর ছায়া বিস্তার করে যা ফল গাছের জন্য যম স্বরূপ। এতে ফলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রাম বাংলার প্রতিটি বসতবাড়িতে শুধু ফল চাষ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাহলে ফল গাছ থেকে আমরা পাবো খাদ্য, পুষ্টি, অর্থ ও সুন্দর পরিবেশ। এভাবে গড়ে উঠুক সুখী সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম