কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ যশোরে জেলায় আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এবার মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও কম ছিল। জেলার বেশির ভাগ এলাকায় এখন চলছে আউশ ধান কাটা ও মাড়াই। বাজারে ধানের দামও ভালো। আউশের ভালো ফলন ও দামে বেজায় খুশি চাষিরা।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আউশ ধান চাষের খরচ বোরো ধান চাষের চেয়ে অনেক কম। সরকারিভাবে সার ও বীজে প্রণোদনাও দেওয়া হয়। বাজারে ধানের দাম ভালো। এ কারণে অনেকে আউশ ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, গত মৌসুমে জেলায় ১৭ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল। এবার ১৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। চাষিরা বিআর-২৬, ব্রি-২৮, ৪৮, ৫০, ৫৫, ৫৮, ৬৩, ৮২, ৮৩, বিনাধান-১৯, রহিম স্বর্ণ, শুভলতা, গণতারা, জিএস ওয়ান, জামাইবাবু ও হাইব্রিড ধান ইস্পাহানি, সিনজেনটা, ১২০৬, তেজগোল্ড, এসএলএইটএইচ, হীরা এবং অ্যাগ্রো-১৪ জাতের ধানের চাষ করেন।
এবার জেলার ৭ হাজার ২০০ কৃষককে আউশ চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক কৃষক ৫ কেজি করে বীজধান, ২০ কেজি ডিএপি (ডাই–অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ও ১০ কেজি এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার পেয়েছেন।
যশোরের মনিরামপুর, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, কোথাও কোথাও ধান পাকতে শুরু করেছে। কোথাও ধান কাটা, আঁটি বাঁধা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা। বৃষ্টিতে ভিজে ধান যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য অনেক কৃষক খেতের পাশের উঁচু জায়গায় ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। অনেকে পাকা সড়কের ওপর মাড়াই করা ধান ও খড় শুকাচ্ছেন।
পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে খেতে ধান কাটাচ্ছিলেন মনিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি গ্রামের চাষি লিটন রায়। ধান কাটার ফাঁকে তিনি বলেন, ‘আউশ ধানে খরচ বোরো ধানের চেয়ে অনেক কম। এবার আমি দেড় বিঘা (৫২ শতকের বিঘা) জমিতে মিনিকেট জাতের ধান চাষ করেছি। ধানের চারা রোপণের পরপরই পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। তারপরও ধান খারাপ হয়নি। আশা করছি, ২৫ থেকে ২৮ মণ ধান পাব।’
বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম এবার ১৮ কাঠা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধানের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। ধান খুব ভালো হয়েছে। ধানে লাল চড়তে শুরু করেছে। এবার ১৮–২০ মণ ধান পাব। বাজারে ধানের দামও ভালো।
অভয়নগর উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের আউশ চাষি জাকির হোসেন এবার ১৭ কাঠা জমিতে হীরা ধানের চাষ করেছেন। তিনি মাড়াই করে ১৭ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আউশ ধানে খরচ বোরো ধানের প্রায় অর্ধেক। ধানের ফলন এবার ভালো হয়েছে। বাজারে মোটা ধান ৯৫০ থেকে ৯৬০ টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আউশ মৌসুমের প্রথম দিকে খরা থাকলেও পরের দিকে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয়েছে। চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক সময়ে আউশ ধান রোপণ ও বপনের কাজ করেছেন। সরকারিভাবে তাঁদের কিছু সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। আউশ ধান খুব ভালো হয়েছে।
সুত্রঃ প্রথম আলো / কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম