‘কৃষি সম্প্রসারণে নার্সারির ভূমিকা অনস্বীকার্য’
কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বর্তমানে নার্সারির ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবেশ সংরক্ষণেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নার্সারিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফলদ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা কলম উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) আওতায় প্রথম নার্সারির যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। এর সফলতা দেখে কিছু উদ্যোক্তা এগিয়ে আসলে তাদের এ দফতর থেকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে মাতৃগাছ, সায়ন, বীজ, চারা-কলম ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হয়। মহিলাদেরও এর সাথে সম্পৃক্ত করলে সবাই এ ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেন। নার্সারি ব্যবসার সফলতার জন্য অনেক নারী-পুরুষকে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার প্রদান করা হয়। নার্সারি ব্যবসা লাভজনক হওয়ার কারণে দ্রুত এর ব্যপ্তি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
এখন বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নিবন্ধনকৃত নার্সারির সংখ্যা ১৮০০০টির বেশি। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০০ কোটি টাকার বেশি। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এ খাতের সাথে সম্পৃক্ত। নার্সারি করে গ্রামের বহু দরিদ্র মানুষ লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। নার্সারি ব্যবসার সফলতা দেখে কয়েকটি বড় বড় এনজিও এখানে বিনিযোগ করেছে। সরকারি কয়েকটি নার্সারির মতো তারাও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে চারা-কলম উৎপাদন করছে। বাংলাদেশে সারা বছর কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ কোটি ফলদ, বনদ, ভেষজ, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা বিক্রি হয়। ব্যবসাটি দেশের পরিবেশ উন্নয়নেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। নার্সারিতে এখন যে শুধু চারা-কলম পাওয়া যায় তাই-ই নয়।
ডিএই এর হর্টিকালচার উইং এর আওতায় সারা দেশের উদ্যান ফসল সম্প্রসারণ, মাতৃবাগান সৃজন, জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ, মান সম্পন্ন বীজ-চারা-কলম উৎপাদন এবং সুলভ মূল্যে তা সরবরাহের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে দেশি ফলের পরিচিতি বাড়ানো ও বারো মাস ফল প্রাপ্যতার কৌশল নির্ধারণ করে মাঠ পর্যায়ে বাণিজ্যিক নার্সারি স্থাপনে সহযোগিতা ও নার্সারি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এসব নার্সারির কার্যক্রমকে মানুষের নজরে আনা ও বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে চারা-কলম লাগানোর প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ডিএই এর উদ্যোগে প্রতি বছর ফল মেলা, বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর নিয়মিতভাবে এ উইংয়ের মাধ্যমে দেশব্যাপী ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ উদযাপন করে থাকে। এ উপলক্ষে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফল মেলার অয়োজন করা হয়। ওইসব মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফল প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং কৃষক পর্যায়ে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ফলের চারা সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
তবে নার্সারির উন্নয়ন ও আরও বিকাশের জন্য দেশের যুব সমাজকে এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান আরও সহজীকরণ করতে হবে। উদ্বুদ্ধ জনগণকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য ডিএই সবসময় প্রস্তুত আছে। উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে গুণগতমানসম্পন্ন চারা-কলম উৎপাদনের জন্য এককালীন মূলধন প্রয়োজন। যুব সমাজকে প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করে এ পেশায় সম্পৃক্ত করতে পারলে ভবিষ্যতে নার্সারি শিল্প সত্যিকারভাবে শিল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ফলের মতো দেশের চাহিদা মিটিয়ে নার্সারি পণ্য বিদেশেও রফতানি হতে পারে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম