নিজস্ব প্রতিবেদক : কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মো. খাইরুল আলম । সে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ভোল দীঘি কামিল মাদ্রাসার কামিল ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় চাষি খাইরুলের সঙ্গে। তিনি জানান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নারায়ণপুর গ্রামে পাহাড়ের ঢালুতে ১৫০ শতক জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে পলি শেড নির্মাণ করে বারী-৪ টমেটো চাষ করেন তিনি। জমি প্রস্তুত, সার, ওষুধ ও পরিচর্যা বাবদ তার ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ভাল ফলনের আশায় তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় নিজ জমিতে ব্যয় করেন।
চলতি মৌসুমে তিনি এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন কোনো রোগ বালাইয়ের আক্রমণ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তার চাষকৃত জমি থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন।
শিক্ষার্থী খাইরুল আলম বলেন, গত বছর করোনা মহামারির কারণ যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তখন আমি আমার নিজ এলাকায় চলে আসি। লকডাউনে ঘরে বসে অলস সময় কাটাতে বিরক্ত লাগছিল। তখন আমাদের বাড়ির পাশের সীমান্তবর্তী পাহাড়ের ঢালুর পতিত জমিতে কিছু একটা করার চিন্তা করি।
‘এক পর্যায়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে টমেটো চাষের সিদ্ধান্ত নেই এবং সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫০ শতক জমি তৈরি করি। জমি তৈরির পাশাপাশি সিলেট কমলগঞ্জ থেকে উন্নত জাতের বারী-৪ টমেটোর গ্রাফটিং কলমের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করি এবং এতে সফল হই। ভালো ফলন হওয়ায় আমি আর্থিকভাবে লাভবান হই।’
তিনি জানান, এ বছর আমি দেড় একর (১৫০ শতক) জমিতে ১৭টি পলি সেট নির্মাণ করে প্রায় ছয় হাজার বারী-৪ টমেটোর গ্রাফটিং কলমের চারা রোপণ করেছি। বর্তমানে আমার জমিতে টমেটো পাকা শুরু হয়েছে এবং তা এলাকার লোকজন পারিবারিক চাহিদা মেটাতে জমি থেকে গাছ পাকা টমেটো ১০০ টাকা দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান চাষকৃত জমি থেকে এ পর্যন্ত আমি ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। যখন পুরোদমে টমেটো পাকা শুরু হবে তখন বড় পাইকারদের কাছে এবং বিভিন্ন শপিংমলে বিক্রি করা হবে।
নারায়ণপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, এতো অল্প সময়ে খাইরুল আলম টমেটো চাষ করে যে সফলতা পেয়েছে তা আমাদের কাছে এখন অনুকরণীয়। তার টমেটো চাষ দেখে আমারও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। তার মত আমরাও টমেটো চাষ করব আশা করছি।
একই গ্রামের নাঈম বলেন, আমরা তো এই টমেটো বাজার থেকে কিনে খাই। তবে এই এলাকায় এর আগে কাউকে চাষ করতে দেখিনি। তাই খাইরুল আলম ভাইয়ের এই চাষকৃত জমি দেখতে এসেছি। দেখে বেশ ভালো লেগেছে। তাই সঙ্গে করে বাড়ির জন্য দুই কেজি টমেটো কিনে নিয়েছি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হাসান বলেন, বর্তমানে গ্রাম ও শহরের সকল মানুষের মধ্যে টমেটোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই সঙ্গে এই টমেটোর অনেক বেশি গুণাগুণও রয়েছে। টমেটো চাষে খাইরুল আলমের এই যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। খাইরুল আলমের আবাদকৃত জমি পরিদর্শনসহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, খাইরুল আলমের এই সাফল্য দেখে ওই এলাকার অনেকেই এখন এই বারী-৪ টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।
কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম