কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্ট:বিগত কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশের কৃষিতে ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত বালাইনাশকের ব্যবহার হয়ে আসছে। আর রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত বালাইনাশক ব্যবহারের বিকল্পও আমাদের ছিল না। তাই মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে চলেছে। অপরদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়।
মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি, পানি, বায়ু দূষিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশে, প্রতিবেশ ও প্রকৃতির উপকারী পোকামাকড় ।
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, বিষাক্ত এসব কীটনাশক এর প্রভাবে খাল বিল জলাশয় থেকে উজাড় হয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, চেলা, শাল চোপরা, শৌল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বুড়াল, বাইম, খলিসা, ফলি, চিংড়ি, মালান্দা, খরকাটি, গজার, শবেদা, চেং, টাকি, গতা, বালিয়া, চকুয়া, ইত্যাদি মাছ।
বিষাক্ত কীটনাশক এর এসব ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে জাতীয় জৈব কৃষি নীতির খসড়া অনুমোদনও দিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর ১৭২টি দেশে জৈব চাষাবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে ৭৮টি দেশ নিজ নিজ জৈব কৃষি নীতির প্রবর্তন করেছে। তাদের অনুসরণে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত ও ভুটান ইতিমধ্যে জৈব কৃষি নীতির প্রবর্তন করেছে।
জৈব কৃষিতে বাংলাদেশ সরকার গত ২০১৬ সাল থেকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। জৈব কৃষির সম্প্রসারণে দেশের কৃষি বিভাগ সবজি উৎপাদনের অন্যতম ক্ষেত্র দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষি প্রতিক্ষণের মাঠ প্রতিবেদনেও এ চিত্র দেখা গেছে।
জৈব কৃষির সম্প্রসারণে উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি শিবগঞ্জের দেউলী ইউনিয়নে পরিচালিত হয়েছে “আইপিএম মডেল ইউনিয়ন” কার্যক্রম। রবি/২০২০ সালে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলে খরিপ-১/২০২১ পর্যন্ত। ৫০০ জন সবজি চাষী এবং ৩০০ বিঘা সবজি জমি নিয়ে পরিচালিত হয় এ কার্যক্রম। কৃষক-কৃষানীদের ২০ দলে ভাগ করে দেয়া হয় বাস্তব ভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং মাঠে তা বাস্তবায়ন করা হয়। উল্লেখ্য সারা দেশে মাত্র ১০ টি ইউনিয়নে পরিচালিত হয় আইপিএম মডেল ইউনিয়ন কার্যক্রম। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জৈব প্রযুক্তি ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে চাষ হচ্ছে নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনী এবং উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে চাষ হচ্ছে নিরাপদ সবজি। নিরাপদ সবজি চাষে প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে কৃষি বিভাগ।
কথা হয় শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার কৃষক মোঃ মাহফুজার রহমান এর সাথে তিনি জানালেন, আগে আমরা সবজি চাষে সম্পূর্ণরুপে রাসায়নিক কীটনাশকের উপর নির্ভর করতাম। কিন্তু এখন সবজি চাষে বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছি এতে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। আর ফসল উৎপাদনও বেড়েছে।
জৈব কৃষি নিয়ে সরাসরি মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন, শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান, তিনি জানালেন, নিরাপদ ফলমুল শাক সবজির উৎপাদন ও চাষাবাদ বৃদ্ধিকরনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি প্রতিক্ষণকে তিনি জানান, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনী ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সবজি চাষে ব্যবহার হচ্ছে কিউলিউর, স্পোডো লিউর, বিএসএফবি লিউর সম্বলিত ফারোমন ফাঁদ। সবজির ক্ষতিকর মাছিপোকা দমনে ব্যবহার হচ্ছে আকর্ষণ ও মেরে ফেলা ফাঁদ।
সবজির বালাই দমনে ব্যবহার হচ্ছে ইকোম্যাক, বায়োডার্মা, এসএনপিভি, স্পাইনোম্যাক্স, ফাইটোম্যাক্স, বায়োম্যাক্স, ফাইটোক্লিন, সয়েল রিচার্জ, সাকসেস, বায়োনিম প্লাস, ডেকোপ্রাইমা সহ বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক। এছাড়াও প্রকৃতিতে উপকারী পোকার বংশবৃদ্ধিতে অবমুক্ত করা হচ্ছে ব্রাকন হেবিটর নামক উপকারী পোকা।
কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম