কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্টঃ বেতগাছ আর রিপোর্ট বেতফল। একসময় আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি বাড়ির ঝোপঝাড়ের ভেতর প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো একটি উদ্ভিদ বেতঝোপে ফলগুলো সুদৃশ্যভাবে ঝুলে থাকত। এখন গাছও নেই, ফলও নেই। বেত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। বেত গাছের ইংরেজী নাম Rattan Plam Tree. বেতগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Calamus tenuis, যা Arecaceae পরিবারভুক্ত।
বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার আর মাত্রাতিরিক্ত আহরণ বেতগাছের বিপন্নতার জন্য দায়ী। বেতফলকে অঞ্চলভেদে বেত্তুন, বেথুন, বেথুল, বেতুল, বেতগুলা, বেতগুটি, বেত্তুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
বেত কাষ্ঠল লতার সপুষ্পক উদ্ভিদ। বাংলাদেশে কয়েক প্রজাতির বেতগাছ পাওয়া যায়। যার মধ্যে সাচি বা জালিবেত, জায়তবেত, গোলাফবেত, কেরাকবেত, পাটিবেত ইত্যাদি।
এক সময় বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের শালবন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মাত বেতগাছ। এদের কাণ্ড চিকন, লম্বা, কাঁটাময়, খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিলিমিটার হয়ে থাকে। কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয়। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাছের নিচের অংশ পোক্ত বা পরিপক্ক হতে থাকে। পরিণত বয়সে ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনও কখনও তার চেয়েও বেশি লম্বা হতে পারে। সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমি ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় বেতগাছ জন্মে। কিছুদিনের মধ্যেই গাছটি ঘন হয়ে ঝাড়ে পরিণত হয়। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও হাওরের কান্দা বা কিনারায় বেতগাছ জন্মে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু বেত চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সচেতনতার অভাবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলে বেতগাছ দেখা যায়।
বেত গাছের আদি আবাস হিমালয়ের উষ্ণ এলাকা। বেতফল অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকেরই খুবই প্রিয়। ফল দেখতে গোলাকার, লম্বায় ১ থেকে দেড় সেন্টিমিটার, ছোট ও কষযুক্ত বা টকমিষ্টি। ফলটি পুষ্টিকর, মুখরোচক ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। খোসা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম। বীজ শক্ত। কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা ধুসর সাদা রঙের হয়। গুচ্ছবদ্ধ ফল প্রতি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত থাকতে পারে। এগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিলে।
কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম