কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রথমবারের চাষাবাদহয়েছে তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ। খেতে সুস্বাদু নতুন জাতের বিদেশি এ তরমুজ প্রথমবার চাষেই দুই লাখ টাকা খরচ করে তিন ভাই আয় করেছেন আট লাখ। এবার পাঁচ ভাই ১৪ লাখ টাকা খরচ করে ৬০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। এক গোল্ডেন ক্রাউনেই ভাগ্যের চাকা বদলে গেছে পাঁচ ভাইয়ের। কিছুদিন আগেও প্রবাসে চাকরি করে কোনো রকম জীবনযাপন করলেও এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন তারা।
তাইওয়ান থেকে গোল্ডেন ক্রাউন বীজ দেশে আমদানি করে এগ্রি কনসার্ন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র ১০ গ্রাম বীজ এক হাজার দুইশ টাকায় কিনতে হয় কৃষককে। ১০ গ্রামে ২৫০ থেকে ৩০০টি বীজ থাকে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় সমকালকে বলেন, দেশের কৃষি খাতে নতুন আশা জাগালো বারোমাসি তাইওয়ান গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ। চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বারোমাসি তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। আট একরে চাষ হলেও চার একরের তরমুজ উঠতে শুরু করেছে। পাঁচ ভাই এ তরমুজ চাষ করে বিনিয়োগের পাঁচ থেকে থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন। তাদের দেখে অনেকেরই আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষক আবুল হাশেম বলেন, চলতি বছর জুনের দিকে প্রথম ৪০ শতক জমিতে গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ চাষ করেছিলাম। ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ করে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো আয় করেছি। তাই এবার আরও বেশি জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। পাঁচ ভাই মিলে আট একর জমিতে আবাদ করেছি। ১০-১২ লাখ টাকা খরচ হলেও ভালো ফলন হওয়ায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আয় করতে পারব বলে আশা করছি।
বছরে ফলন দেয় তিনবার, ৩০ ডিগ্রিতে মেলে বাম্পার ফলন :তাইওয়ান জাতের তরমুজের বাম্পার ফলন হয় ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। যদিও আমাদের দেশের আবহাওয়ায় শীতে তরমুজ আবাদ হয়। তখন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি থাকে। এ সময়ে তাইওয়ান গোল্ডেন ক্রাউনের ফলন ভালো হয় না। কৃষিবিদ প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, তাইওয়ান জাতের তরমুজ বছরে নয় মাস ভালো ফলন দেয়। তবে শীতে এ জাত আবাদ করা গেলেও তাপমাত্রা কম থাকায় ফলন তেমন একটা ভালো হয় না। এ ছাড়া শীতে রোগবালাই বেশি থাকায় এ তরমুজের জন্য সহায়ক নয়। তাই শীত ছাড়া অন্য সময় আবাদ করার পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। ১২ মাসের মধ্যে ৯ মাস গরম থাকায় এ সময়ের মধ্যে তিনবার আবাদ হয়ে থাকে। বীজ লাগানোর ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়।
কানিতে খরচ ৬০ হাজার, আয় তিন লাখ টাকা :গোল্ডেন ক্রাউন এক কানি জমিতে চাষ করতে প্রথমবার খরচ পড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। দ্বিতীয়বার আবাদে সেই খরচ নেমে আসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়। এক কানি জমিতে আয় হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। চাষাবাদের খরচ বাদ দিয়ে গড়ে দুই লাখ টাকার বেশি আয় করছেন কৃষক পাঁচ ভাই। চলতি বছরের জুনে প্রথমবারের মতো চাষ করেন তারা। তিন ভাই আবুল হাশেম ৪০ শতক, আবুল হোসেন ৪২ শতক ও আবুল কাশেম ১৬ শতক জমিতে আবাদ করেন। সেখান থেকে তারা প্রতি জন প্রায় তিন লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেন। প্রথমবার সাফল্য পেয়ে এবার পাঁচ ভাই আবুল হাশেম দুইশ শতক, আবুল হোসেন তিনশ শতক, আবুল কাশেম ১৬০ শতক, আমির হোসেন ১২০ শতক এবং শামসুল ইসলাম ১০ শতক জমিতে আবাদ করেন। আগস্টে আট একর জমিতে তারা ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে চাষাবাদ করলেও এখন ফলন উঠতে শুরু করেছে। আট একর থেকে তারা ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। স্থানীয় আড়তে কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। সেই হিসাবে এক কানি জমিতে সাড়ে ছয় হাজার কেজি তরমুজের ফলন হয়ে থাকে। তাতে কানিতে তাদের সোয়া তিন লাখ টাকা করে আয় হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন বলে জানান কৃষকরা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রথমবার আবাদেই বাজিমাত :তাইওয়ান থেকে আমদানি করে আনা বীজে গোল্ডেন ক্রাউন তরমুজ আবাদ করে প্রথমবারেই বাজিমাত করেছেন চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের মিঠার দোকান এলাকার বাসিন্দা পাঁচ ভাই আবুল হাশেম, আবুল কাশেম, আবুল হোসেন, আমির হোসেন ও শামসুল ইসলাম। তাদের মধ্যে আবুল হোসেন কৃষক হলেও অন্য চার ভাই ছিলেন সৌদি আরব। প্রবাসে গিয়ে চাকরি করে সংসার চালালেও তাদের ভাগ্যের তেমন বদল হয়নি। তবে এবার বিদেশি তরমুজ আবাদ করে তাদের ভাগ্যের চাকা বদলে গেছে। ছদাহার মিঠার দোকান এলাকার মৃত মোস্তাক আহমদের ছেলে তারা।
সুত্রঃ দৈনিক সমলাল অনলাইন / এম ইসলাম