ড্যানিয়েল প্রাইস এই তথ্যচিত্র নির্মাণকে একটি দীর্ঘ পথপরিক্রমার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ছাত্রাবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশ ও অন্য উপকূলীয় দেশগুলোর সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হন। কিন্তু বাংলাদেশে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই সংকটের মানবিক দিকটি তিনি সম্যক বুঝে উঠতে পারেননি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রায় তিন কোটি মানুষ তাদের আবাসন হারাতে পারে, হারাতে পারে তাদের আজন্মের পরিচিত গ্রাম ও অসংখ্য স্মৃতি। অথচ এই দরিদ্র ও নিরীহ মানুষগুলো নিজেরা কোনোভাবেই জলবায়ু-সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়।
তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে, তার মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। তিনি বলেন, একা বাংলাদেশের পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। তিনি আশা প্রকাশ করেন থার্টি মিলিয়ন তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন কী সংকটের সৃষ্টি করতে পারে, সে বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সচেতনতা বাড়বে।
তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হওয়ার পর আলোচনায় যাঁরা অংশ নেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইউএনডিপির সহকারী মহাসচিব হাওলিয়াংখু, বাংলাদেশি আইনজীবী মণিকা জাহান বোস ও জাতিসংঘের অন্যতম পরিবেশ বিশেষজ্ঞ রলেস্টোন মোর। প্রদর্শনী শেষে সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় চলচ্চিত্রকার প্রাইস এই তথ্যচিত্র নির্মাণে বাংলাদেশে তাঁর তিন সপ্তাহ কাটানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন। সাইকেলে চড়ে উত্তর মেরু থেকে প্যারিস পর্যন্ত গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের উপকূলীয় মানুষের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলায় যে সাহস তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, অন্য কোথাও তা তাঁর চোখে পড়েনি। তিনি নিজের চোখে নদীর ভাঙন প্রত্যক্ষ করেছেন, সে ভাঙন সত্ত্বেও মানুষ কী বিপুল আশায় নতুন করে বসত গড়ে, তাও দেখেছেন। তিনি জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। ধনী যেসব দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য মূলত দায়ী, তিনি আশা করেন সেসব দেশ বাংলাদেশ ও অন্যান্য উপকূলীয় দেশের পাশে এসে দাঁড়াবে।
কৃপ্র/মোমিন/ খালিদ