কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ অসময়ের ভারী বর্ষণে কপাল পুড়েছে যশোরের কৃষকদের। টানা বৃষ্টিপাতে ভাসছে কৃষকের আমন ধান, সবজি ক্ষেত। তলিয়ে গেছে বোরো ধানের আগাম বীজতলা, আলু ও মসুর ক্ষেত। জেলায় প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার হেক্টর জমির ধান ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর অব্যাহত এই বৃষ্টিপাতে জনভোগান্তিও চরমে উঠেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানি ঢুকে পড়েছে বসতঘরেও।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৮ মিলিমিটার। অসময়ের এই বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষি।
শরিফুল ইসলাম বলেন, তার এলাকার অধিকাংশ কৃষকের ধান ক্ষেতে পানি জমেছে। কেটে রাখা ধানগুলো এখন পানির নিচে। ওই ধান যেমন বাড়িতে আনতে দ্বিগুণ খরচ; তেমনি বাচালি আর হবে না।
মণিরামপুরের মাহমুদকাটি গ্রামের চাষি জাহাঙ্গীর আলী জানান, রঘুনাথপুর বিলে তার ২৫ কাঠা জমির কেটে রাখা ধান ভাসছে। হাঁটুপানিতে কাটা ধান ভাসছে একই বিলের চাষি জাকির হোসেন, মইনুদ্দিন হোসেন, আল-আমিন, ইউসুফ আলী ও শহিদুল ইসলামের।
টেংরামারী বিলের কৃষক আব্দুল ওয়াদুদের ১৫ কাঠা, আব্দুল আজিজের ১৫ কাঠা ও ইব্রাহীম হোসেনের ৫ কাঠা জমির কেটে রাখা আমন ধান পানিতে ভাসছে। আমনের আড়াই বিঘা পাকা খেতে তলিয়ে গেছে রঘুনাথপুর গ্রামের চাষি জয়কৃষ্ণ মন্ডলের, রোহিতা শেখপাড়া মাঠের চাষি নাজিম উদ্দিনের ২ বিঘা, রঘুনাথপুর মাঠের জামাল হোসেনের ২ বিঘা, নজরুল ইসলামের ২ বিঘা, আমন ক্ষেত হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে।
চৌগাছা উপজেলার বেলেমাঠ এলাকার কৃষক আজগর আলী জানান, তিনি দেড়বিঘা জমিতে পেঁয়াজ, একবিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। তার ক্ষেতের ওপর দিয়ে এখন পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। ক্ষেতের ফসলের পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
চাষি জামাল হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষায় ২ বিঘা আমন তলিয়ে যায়। পানি টানার পরে ধান মোটামুটি ভালো হয়েছিল। মাসখানেক আগের ঝড়োবৃষ্টিতে ধানগাছ শুয়ে যায়। ক্ষেতে পানি থাকায় ধান কাটতে পারিনি। এখনকার বর্ষায় খেতে হাঁটুপানি জমে ধান তলিয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে কৃষকের সর্বনাশ হয়েছে। প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে থাকা আমন ধান, রোপা ধানের চারা, গম, সবজি, সরিষা, মসুর, আলু পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
এদিকে, জাওয়াদের বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অনেক এলাকার ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ভ্যানচালক জামাল আহম্মেদ বলেন, ‘গত দুদিন ধরে বৃষ্টি ও শীতের কারণে ভ্যান চালাতে পারিনি। রোজগারও নেই। কোনো আয় না থাকায় অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।
ওই এলাকার রওশনারা বেগম নামে এক নারী বলেন, বৃষ্টি ও শীতের কারণে টিনের ঘরে বসবাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠে কাটা ধান ভিজে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সুত্রঃ যায়যায়দিন অনলাইন / এম ইসলাম