কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নীলফামারীর
কচুকাটা এলাকার মোঃ মামুন শাহের বাগানে গত কয়েক বছর ধরে চাষ হচ্ছে সুইট লেমন নামক একটি ফলের।
ফলটি যখন পাকে তখন সবুজ পাতা আর কমলা রংয়ের ফল মিলিয়ে পুরো গাছটি দেখতে দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
লেবু গাছের চেয়ে একটু বড় আকৃতির এ গাছটিতে এক সাথে ৪/৫শ পর্যন্ত ফল হতে দেখা যায়।
মামুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন গাছ রোপণের দেড় মাসের মধ্যেই ফুল আসতে শুরু করে এবং তখন একটু বাড়তি পরিচর্যা করলে দারুণ সুফল পাওয়া যায় অর্থাৎ গাছটি ফলে ফলে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে।
তবে বাংলাদেশে অনেকেই আবার মনে করেন এটি একধরনের শোভাবর্ধনকারী লেবু গাছ, যার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খুব একটা নেই।
নীলফামারী সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হাসান বলছেন, এই ফলটির ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে কেমন হবে তা বুঝতে আরও কিছুটা সময় নিতে হবে।
নতুন কিছু কৃষকরা সহজে নিতে চায় না। আবার পর্যাপ্ত বাজার সম্ভাবনা না থাকলে কৃষকদের প্রলুব্ধ করাও ঠিক হবে না। মাত্র তো শুরু হলো চাষ। আরও কিছু সময় যাক, মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হোক – এরপরেই আসলে বলা যাবে সুইট লেমনের বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে আছে কি-না।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ ডঃ হামিদুর রহমান বলছেন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকুক আর না থাকুক, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে এ ফলটি দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ডঃ হামিদুর রহমান বলছেন এটি টক-মিষ্টি জাতীয় ফল এবং এর খোসাও সুস্বাদু ও রুচি বর্ধনকারী।
“একটি গাছে এই ফলটি বিপুল পরিমাণ হয়। টবেও করা যায়। এর খোসা অত্যন্ত রুচিবর্ধনকারী। মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারী।
দেখতে কিছুটা ডিমের মতো সুইট লেমন ফলটির ভেতরের শাঁস টক মিষ্টি এবং এতে প্রচুর সাইট্রিক এসিড আছে যা মানুষের জন্য দরকারি।
কৃষিবিদরা বলছেন, এটি হলো লেবুজাতীয় ফল এবং লেবু যেমন কেটে ভেতর থেকে রস খেতে হয় এটা তেমনটি নয়। বরং এখানে বাকলটা খাওয়ার জন্য দারুণ স্বাদের। আর ভেতরে শাঁসটা টক মিষ্টি ধরণের। বিচি ফেলে দিয়ে বাকী অংশটা পুরোটাই খাওয়া যায়।
মোঃ মামুন শাহ বলছেন তাদের পারিবারিক নার্সারি ব্যবসা আছে এবং তার সূত্র ধরেই কয়েক বছর আগে থাইল্যান্ড থেকে সুইট লেমনের চারা এনেছিলেন তারা। আমরা যেটি করছি সেটি থাইল্যান্ড ভ্যারাইটি। সৌখিন চাষাবাদের জন্য এটি ভালো ফল। দেখতে সুন্দর। তাই ছাদবাগানেও দারুণ হবে।
পাতার চেয়ে ফল বেশি হয়
মূলত সাইট্রাস জাতীয় এই ফলটি বাংলাদেশে তেমন একটা পরিচিত না। দেশের কিছু নার্সারিতে কয়েক বছর ধরে এটি দেখা যাচ্ছে। এই গাছ লম্বায় আড়াই ফুটের মতো হয় ও অনেক ডালপালায় ভরপুর হয়। সারা বছরই থোকায় থোকায় ফল হয় এই গাছে।
উচ্চতার তুলনায় গাছটির ফল ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। গাছের বয়স বাড়লে ফলও বেশি হয়।
কাঁচা অবস্থায় লেবুর মতো এই ফলটি সবুজ রংয়ের হয় আর পাকলে হলুদ বা কমলা রং হয়। অনেকে বলেন ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য এটি বেশ উপকারী এবং ফলটি নিয়মিত খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
ডঃ হামিদুর রহমান বলছেন বাড়িতে বা ছাদবাগানে ফলটি যেমন সৌন্দর্য বাড়াতে পারে তেমনি শরীরকেও সুস্থ রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সুত্রঃবিবিসি বাংলা