কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে বড় ধরনের চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছেন সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তবে সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ভিন্ন সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীবের বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে সম্পদশালী দেশগুলোর কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া উচিত, এই বিষয়ে মতৈক্যের অভাবে ‘প্রকৃতির জন্য শান্তি চুক্তি’ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কানাডার মন্ট্রিলে এই জীববৈচিত্র্য সম্মেলন–কপ-১৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর থেকে এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ সোমবার এই সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে এই সময়ের মধ্যে চুক্তির ব্যাপারে পক্ষগুলো একমত হতে না পারলে সম্মেলনের সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে। এক হাজারের বেশি বিজ্ঞানী, বিভিন্ন দেশের সরকারের কর্মকর্তা, মন্ত্রী ও পরিবেশকর্মীরা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে তহবিল নিয়ে প্রথম দিকে খানিকটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হলেও গতকাল বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের অবস্থান খানিকটা আশাবাদ জুগিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চীনের পরিবেশমন্ত্রী হুয়াং রুনকিউ গতকাল মন্ট্রিয়লে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের আশাবাদ ধরে রাখার পাশাপাশি মতৈক্যে পৌঁছাতে পারব, এই ব্যাপারে আমরা বেশ আশাবাদী।’ এ ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে প্রতিনিধিরা কী কী বিষয়ে মত দিয়েছেন, তার একটি খসড়া প্রকাশের কথা জানিয়েছেন তিনি।
কানাডার স্থানীয় সময় গতকাল সকালে এই খসড়া প্রকাশ করবেন বলে জানান তিনি। এরপর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এতে মতামত দেবেন।
কানাডার পরিবেশমন্ত্রী স্টিভেন গুইলবল্ট বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। আমি ঠিক জানি না, আমাদের কতজন ভেবেছিলেন যে সম্মেলন থেকে ঐকমত্যের এই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।’
এই সম্মেলন নিয়ে টুইট করেছেন ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি লিখেছেন, ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখন নয়। বড় সিদ্ধান্ত নিন।’
এবারের জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ শতাংশ ভূমি ও সমুদ্র সংরক্ষণ। তবে এই লক্ষ্য অর্জন কতটা সহজ হবে, এটা নিশ্চিত নয়। কারণ বর্তমান ১৭ শতাংশ ভূমি ও ৭ শতাংশ সমুদ্র সংরক্ষিত রয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ খুব কঠিন কিছু হবে না। তাঁরা চাইছেন সীমা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হোক।
নতুন এই লক্ষ্যমাত্রায় সম্মতি দিয়েছেন শতাধিক দেশ। তারা বলছে, ৩০ শতাংশ ভূমি ও সমুদ্র সংরক্ষণের উদ্যোগ তারা নেবে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, নির্ধারিত এই লক্ষ্যমাত্রা অধিকাংশ দেশেরই সমর্থন পেয়েছে।
এই সংরক্ষণ নীতিতে যে প্রশ্নটি জোরালো হয়ে উঠছে সেটি হলো, বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসীদের অধিকার। কারণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হচ্ছে, এমন ৮০ শতাংশ অঞ্চলে তাঁদের বসবাস। এ ছাড়া এটাও বলা হয়ে থাকে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এই আদিবাসীরাই এগিয়ে। ফলে অধিকাংশ পরিবেশ অধিকারকর্মী চাইছেন, এই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে গিয়ে যেন আদিবাসীদের অধিকার পদদলিত না হয়।
সুত্রঃ প্রথম আলো অনলাইন