কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিকল্পনা গ্রহণ বা আইন প্রণয়নে সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আর সেই কাজটি সঠিকভাবে করতে হলে বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের রফিকুল ইসলাম খান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের হাওর, নদী ও বিল: সমস্যা ও প্রতিকার ‘ বিষয়ক বিশেষ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) যৌথ প্রযোজনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগিতায় দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন হয়। এতে শনিবার ১২টি ভিন্ন সেশন ও ৬৫ টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। এর আগে গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের নিয়ে আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিডিপি’র ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদানকালে সাবের হোসেন বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির অধীনে স্পষ্টকরে ১৮(ক)-তে বলা আছে যে, আমরা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ করব। আমরা যেই পরিকল্পনা গ্রহণ বা আইন প্রণয়ন করব সেটা ১৮(ক) এর চশমা দিয়ে দেখবো। সেটা হলো পরিবেশ রক্ষার প্রথম কাজ। আর সেই কাজটি সটিকভাবে করতে হলে বিজ্ঞান, তথ্য, জ্ঞান এটার কোনো বিকল্প নেই। আমি চাইবো বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) সেই ঘাটতিটা পূরণ করতে না পারলেও কিছুটা অবদান রাখতে পারবে। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির আন্তরিক থাকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি একটি অনেস্ট ডায়ালগ করা হবে বলেও জানান তিনি।
পরিবেশ রক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আমরা স্বাধীনতার অর্ধশতবর্ষ পার করে এলাম। এই ৫০ বছরে কী করেছি বা কী পেয়েছি তার থেকেও বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আগামী ৫০ বছর কীভাবে আমরা কাজ করব এবং পরিবেশের সংরক্ষণ করব। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি শুনানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি এটাতে মতের কোনো পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করিনা। আমরা চাই টেকসই উন্নয়নও হবে পাশাপাশি পরিবেশের বিষয়গুলো যাতে সুরক্ষিত থাকে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে বলে থাকি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা যখন আমাদের দেশের কথা বলি বা ভাবি তখন বিজ্ঞানসম্মতভাবে যেই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া কথা সেভাবে নিতে পারিনা। এর পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণও থাকে। পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে পুরো বিষয়টি ব্যর্থ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যেতে হয়। এটি হলো মূল জায়গা।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনীতিবিদরাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেন। সুতরাং তাদের কাছেই আমাদের শেষ বিচার। কিন্তু সে বিচারের আগে যে চাপ তৈরি করা দরাার সেটা আমরা গতকাল (শুক্রবার) করেছি। সারাদেশ থেকে চার হাজার মানুষ পরিবেশ আনাদোলনে যোগ দিয়েছে। এটি পরিবেশ আন্দোলনের একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। সামনে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো পরিবেশ নিয়ে কী কী করবে সেটা যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে সেই বিষয়টির ওপর জোর দেন তিনি।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সঞ্চলনায় এতে আরো বক্তব্য দেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এম, ফিরোজ আজম্মেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সদস্য ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) বৈশ্বিক সমন্বয়ক মো. খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম।
সুত্রঃ ভোরের কাগজ অনলাইন/ এম ইসলাম