কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ:খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ের বাঁকে-বাঁকে সবুজের পাদদেশে হলুদের ছড়াছড়ি। সবুজের বুকে যেন হলুদের রঙছটা। পাহাড়ের বুকে যতো দূরে চোখ যায় যেন সরিষার হলুদ ফুলের মাখামাখি। যেখানে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্য্যরে নান্দনিকতায়। কৃষি অর্থনীতিতে স্বল্প সময় আর কম খরচে সরিষা চাষে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকরা। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো ও কম সময়ে ফলন কর্তনের সুযোগ থাকায় জেলায় রবি মৌসুমে বাড়ছে সরিষার আবাদ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আবহাওয়া ও মাটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সরিষার জাত মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণে কাজ করছে খাগড়াছড়ি বিনা উপ কেন্দ্র। ইতোমধ্যে বিনা সরিষা ৯ আবাদে ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। বছরব্যাপী শস্য বিন্যাসে চার ফসলি প্রজাতির বীজ ও পরিচর্যার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি ও মহালছড়িতে বিভিন্ন জাতের সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৪৯ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ। সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি তেলের দামবৃদ্ধিতে বেড়েছে সোরাদেশের মতো খাগড়াছড়িতে সরিষার আবাদ বেড়েছে।
খাগড়াছড়িতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সরিষার আবাদ। কৃষি জমি ফেলে না রেখে কম সময়ে বিভিন্ন শস্যের জাত উদ্ভাবন ও পরীক্ষণের চালাচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি পঞ্জিকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিনা সরিষা- ৯ মাঠপর্যায়ে ইতোমধ্যে আলোর মুখ দেখছে। বিগত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় এ জাতের সরিষা আবাদ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা
খাগড়াছড়ি গোমতি এলাকার প্রান্তিক চাষি মো. শাহেদ মিয়া। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় ১০০ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন জানিয়ে বলেন, সরিষা চাষে ১ লক্ষ টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। অপর চাষি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষে লাখ টাকারও বেশী আয় করার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে সরিষা চাষে বেশি লাভবান হওয়ার কারণে কৃষকের ভাগ্য বদলে যেতে পারে।
ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, সরিষা আবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। সরিষা চাষে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সরিষার আবাদ হয়েছে বলেও জানান তিনি। পাহাড়ের সরিষা চাষে কৃষকদের আর্থিক স্বচ্চলতার পাশাপাশি তেলের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, সরিষা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে পরিচিত। আমনের ফসল ঘরে তোলার পর বোরো চাষের জন্য দুই মাস সময় অপেক্ষা করতে হয়। বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরিষা উৎপাদনে দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। কম সময়ে সরিষা চাষে ফলন পাওয়া যায়। সরিষা উৎপাদন করে দেশের সরিষার তৈলের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। পাশাপাশি সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার হয়।
সুত্রঃ বাসস / এম ইসলাম