কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঢাকার জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় সরিষার ব্যাপক চাষ হয়েছে। ফসলের মাঠ সরিষা ফুলের হলুদ আচ্ছাদনে ঢেকে গেছে। উপজেলার বাস্তা, রুহিতপুর, কলাতিয়া, তারানগর ও হযরতপুর এলাকার মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে হলুদ সরষে গাছ। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠে যেদিকেই দুচোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। প্রকৃতির এমন মনোরম দৃশ্যে স্থানীয় প্রকৃতি প্রেমীরাও ছুটে আসছে কৃষকের সরিষার মাঠে। গত বছরের চেয়ে এ বছর আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। এ কারণে উপজেলায় সরিষার ফলনও বেড়েছে। আর সরিষার বাম্পার ফলনে ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষক। এছাড়াও কৃষকেরা যাতে সরিষা চাষে আগ্রহী হয় তাই কেরানীগঞ্জ কৃষি অফিস এক হাজার জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষা বীজ বিতরণ করেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কমবেশি সরিষার চাষ হয়। তবে উপজেলার কলাতিয়া, রুহিতপুর ও হযরতপুর ইউনিয়নে এবার ব্যপকভাবে সরিষার চাষ হয়েছে। কেরানীগঞ্জে এখন কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি সরিষা-১৪, ১৭ ও ১৮ জাতের সরিষা বেশি চাষ করছে। রোপণের মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে সরিষা ঘরে তোলা যায় এবং ফলনও পাওয়া যায় ভালো। চলতি বছরে ২৫৩০ হেক্টর জমিতে ৩৪১৬ মেট্টিকটন সরিষা আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ লক্ষ্যমাত্রা দিন দিন অতিক্রম করবে।
বাস্তা ইউনিয়নের কৃষক জামাল হোসেন জানান, আমি আগে শুধু বোরো ধানের আবাদ করতাম। গতবছর কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ পেয়ে সরিষা আবাদ করে ভালো ফলন পাই। তাই এবার কৃষি অফিসের দেয়া বীজ ও বাজার থেকে বীজ কিনে সরিষার চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি সরিষা বিক্রি করে ভালো লাভোবান হবো।
হযরতপুর ইউনিয়নের কৃষক আঃ মজিদ জানান, তার ৭ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। এতদিন শুধু সবজি ও ধান চাষ করতো। কিন্তু গত ২ বছর স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ওই জমিতে সরিষার আবাদ করছি। এবছর ফলন ভালো হওয়ায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছি। সরিষাকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে চাষাবাদ করছি। এ ফসল বিক্রি করে যে টাকা পাই, ওই টাকা দিয়ে আবার বোরো মৌসুমে ধান রোপণ করি। তাছাড়া সরিষা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। সরিষা বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যায়, আবার তেলের চাহিদাও মেটাতে পারা যায়।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.শহিদুল আমীন বাসসকে জানান, এবছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ২৫৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এতে ৩৪১৬ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। এখন পর্যন্ত ভারি কুয়াশা নেই,পোকার উপদ্রবও কম। যে কারণে সরিষা গাছও রয়েছে রোগমুক্ত। ফলে এবছর সরিষার ভালো ফলন আশা করা যায়। এভাবে ফসলের অনুকূল আবহাওয়া থাকলে সরিষাসহ অন্যান্য সবজির বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে । তিনি আরো জানান, আমরা কৃষকদের কৃষি কাজে উৎসাহিত ও সহযোগিতার জন্য এবছর এক হাজার জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে মোট ৩৫ মেট্রিকটন সরিষা,ভোট্রা,গম, খেসারী ও মসুর ডাল বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও অর্ধেক মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি পেতে সহযোগিতা করে থাকি।
সুত্রঃ বাসস / এম ইসলাম