কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আখের সাথে অন্যান্য শস্য আবাদ কৃষকদের জন্য অধিকতর লাভজনক। কারণ অন্যান্য ফসলের তুলনায় এটি জমিতে মোট শস্য আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
একই জমিতে শুধুমাত্র আখ চাষের তুলনায় পদ্ধতিগতভাবে আলু, পিঁয়াজ, মসূর, শিম, বরবটি, রসুন ও অন্যান্য শীতকালীন শস্য, শাক-সবজি ও মসলার সাথে আখ চাষ করলে- তা আখের উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে।
গতকাল শনিবার বাসস-এর সাথে আলাপকালে গবেষক ও কৃষিবিদরা এ তথ্য জানান। তারা মাঠ পর্যায়ের গবেষণা ফলাফল ও আখ গবেষণায় কৃষকদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে এ তথ্য জানান।
ঈশ্বরদীতে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা (বিএসআরআই)’র পরিচালক (গবেষণা) ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, আখের সাথে অন্যান্য শস্যের এই আন্তঃচাষাবাদ শুধু মোট আবাদের পরিমান বাড়িয়েই দিচ্ছে না, বরং মাটির স্বাস্থ্য উত্তরণে ও উর্বরতা বাড়াতেও এটা সহায়ক। যদিও এ পদ্ধতিতে আখ আবাদ ও এর গুণগত মানের ক্ষেত্রে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না, আর ফেললেও খুবই সামান্য।
আখকে বাংলাদেশের একটি শিল্প শস্য হিসেবে অভিহিত করে তিনি আরো বলেন, গম ও শাকসবজির উচ্চ চাহিদার প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে আখের চাষ নিচু প্রান্তিক জমিগুলোতে চলে যাচ্ছে।
পাশাপাশি, জাতীয় গড় উৎপাদন কাক্সিক্ষত উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম হচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আন্তঃচাষাবাদ ছাড়া বিদ্যমান আখ চাষ অর্থনৈতিকভাবে টিকতে পারবে না। কারণ এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত জমির চাহিদা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় করে। তাই, আখ চাষিদের এই পদ্ধতি গ্রহণ করতেই হবে। জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ বলেন, চলতি মৌসুমে তার জমিতে পিঁয়াজের সাথে আখ চাষ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আখ চাষের জন্য রোপন থেকে শুরু করে সফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত প্রায় ১২ মাস সময় লাগে। আগে, আখ ক্ষেতে এই সময়ে অন্য কোন শস্য রোপন করা হত না। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে তিনি এবার আখ ক্ষেতে বারি-৪ প্রজাতির পেঁয়াজ, আলু ও কলাই ডাল চাষ করেছেন।
তিনি তার আখ ক্ষেতে সহ-ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করেছেন।
অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে একই জমিতে একাধিক শস্য চাষ করলে- সামান্য পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয়। এছাড়া অতিরিক্ত শ্রমও প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আখ চাষ করলে অতিরিক্ত সার বা শ্রম কোন কিছুরই প্রয়োজন হয় না। আর এটা কৃষকদের জন্য সুখবর।
মীরগঞ্জ গ্রামের অপর কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, গত তিন বছরে তিনি আখ ক্ষেতে ২৬ প্রজাতির মসলা ও শাক-সবজি চাষ করেছেন। এ বছর তিনি পেঁয়াজ চাষে সফল হয়েছেন।
তিনি বলেন, এর আগে একই জমিতে শুধু আখ চাষ লাভজনক হয়নি। তাই তিনি আখ চাষ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এ মৌসুমে তিনি আখ ক্ষেতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। তিনি প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত ৪০ মন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছেন।
বিএসআরআই’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শামসুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত আখের সাথে বিভিন্ন শীতকালীন ফসলের ৩০টির বেশি প্যাকেজ তারা উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের কাছে প্রযুক্তিগুলো পৌঁছতে পারছেন না।
এই সমস্যা সমাধানে বিএসআরআই কৃষি, পরিবেশ ও দরিদ্র কৃষকদের আর্থ-সামজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষত অন্যান্য শস্যের সাথে সাথী-সফল হিসেবে আখের একটি উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির সিরিজ উদ্ভাবন করেছেন।
এতে স্থান ও সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করা সম্ভব। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিশেষত বিশ্বের বিভিন্ন ঘন জনসবতিপূর্ণ দেশগুলোর কৃষি উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে মোট উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এছাড়াও এতে প্রায়ই উৎপাদন খরচ মিটিয়ে বেশ ভাল পরিমাণ লাভ পাওয়া যায় এবং প্রতি ইউনিট জমির মোট উৎপাদনও অনেক বেশি হয়। এই পদ্ধতিতে আখ চাষে কোন বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি।
ড. মো. শামসুর রহমান আরো বলেন, জোড় সারিতে একাধিক সফলের ফলন অধিক। একই জমিতে আখ চাষের সাথে অন্যান্য ফসল চাষ জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি অতিরিক্ত জমির ব্যবহার হ্রাস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এম ইসলাম