কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নড়াইল জেলার মেঠোপথের দু’ধারে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা গ্রামবাংলার অতি পরিচিত গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী বুনো পুষ্পজাতীয় উদ্ভিদ ভাঁট। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সাদা ভাঁট ফুলের সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায় পথচারীদের। গ্রাম বাংলার চিরচেনা এ ফুলটি হরহামেশা দেখা গেলেও সাদা ভাঁট ফুলের দিকে তাকালে অনেকের মনে আলাদা একটা অনুভূতি জাগে।
অঞ্চলভেদে এ গাছের ফুল ভাইটা ফুল, ঘেটু ফুল, বনজুঁই ফুল, ঘণ্টাকর্ণ হলেও নড়াইলে ভাঁট ফুল নামে এটি সমাধিক পরিচিত।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ফুল ফোঁটে। এ ফুল ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ফুটতে দেখা যায়। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে ভাঁট ফুলের ঝোঁপ চোখে পড়ে। ভাঁট গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয় এ ফুলের গাছ।এ গাছের পাতা দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদন্ডে ফুল ফোঁটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোঁটে। এ ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায় এ ফুল। ফুল ফোঁটার পর মৌমাছিরা ভাঁট ফুলের মধু সংগ্রহ করে।
নড়াইলের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের চাঁদপুর-বগুড়া বিলের মধ্য দিয়ে যাওয়া সড়ক ও কালিয়া-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে ভাঁট ফুলের সমারোহ দেখলে মনে হবে প্রকৃতি যেন অপরূপ সাজে সেজেছে। এছাড়া জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাগানগুলোতে ভাঁট ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।সড়কে চলাচলকারী লোকজন এবং ঘুরতে বা বেড়ানো দর্শনার্থীরাও তা দেখে মুগ্ধ হন।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক একেএম আহসান হাবীব বলেন, ‘ভাঁট শুধু সৌন্দর্য গুণে নয়,মানব দেহের জন্য এ গাছের অনেক ওষুধি গুণাগুণ আছে। বিশেষ করে চর্ম রোগীদের জন্য নিয়মিত এ ভাঁট ফুলের রস করে দিনে দুই বার ক্ষত স্থানে মালিশ করলে যে কোন চর্ম রোগ দ্রুত সেরে যাবে। অনেক সময় বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিলে এ ভাট ফুলের রস করে ক্ষত স্থানে মালিশ করলে ফোলা ও ব্যাথা দ্রুত কমে যায়। ভাঁটের পাতার রস কৃমি প্রতিরোধেও দারুণ উপকারী।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন,‘ ভাঁটফুল গুল্মজাতীয় দেশী বুনো পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বুনো ফুল, গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযতেœ ফুটে থাকে এ ফুল। ফুল গাছটি ভাঁট বলে পরিচিত হলেও স্থানভেদে এবং ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীতে এর ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে। অনেকে একে বনজুঁইও বলেন। এ গাছের ভেষজ গুণাগুণও রয়েছে।
সুত্রঃ বাসস / এম ইসলাম