কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পলিনেট হাউসে ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি কিংবা প্রখর তাপপ্রবাহ থেকে ফসল রক্ষা করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পলিনেট হাউস তৈরিতে কৃষকের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। পলিনেট হাউস বীজ থেকে চারা উৎপাদন এবং চারা থেকে ফসল উৎপাদন আবার কীটপতঙ্গ থেকে বীজতলা ও ফসল রক্ষা করতে বেশ কার্যকর পদ্ধতি।
জানা গেছে, পলিনেট হাউস পদ্ধতিতে একজন কৃষক সারা বছর সবজি চাষ করতে পারেন। ফলে গ্রীষ্মকালেও শীতকালীন সবজি মুলা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি ফসল যেমন উৎপাদন করা যাবে আবার শীতকালেও গ্রীষ্মের ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে করে সবজি চাষে একধরনের বৈচিত্র্য আসবে এবং আয়ের নতুন নতুন উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে।
সরেজমিনে জেলার দেবিদ্বার, বুড়িচং ও চান্দিনা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পলিনেট হাউসে সাধারণত উচ্চমূল্যের ফসল ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পুদিনা, রক মেলন, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লেটুস উৎপাদন হলেও বর্তমানে সাধারণ সবজি চাষেও এর ব্যবহার বাড়ছে। বারোমাসি সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনেরও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পলিনেট হাউসে বীজ বা ফসল উন্নতমানের পলিথিনের আচ্ছাদন দিয়ে মোড়ানো থাকায় সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ভেতরে প্রবেশ করে ফসলের ক্ষতি করতে পারে না। এ জন্য অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। আর এ পদ্ধতিতে কৃষক সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবেন। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে সফলতাও পেয়েছেন তারা।
বিংলাবাড়ী এলাকার কৃষক মাসুদ মিয়া বাসসকে বলেন, পলিনেট হাউস ব্যবহার করে উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন তিনি। এতে এলাকার অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়ে পলিনেট হাউসে উৎপন্ন চারার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। এখান থেকে উন্নতমানের বীজের চারা পেয়ে খুশি কৃষকেরা। এভাবে চারার উৎপাদনে খরচ কম হয় ফলে দামও তুলনামূলক কম থাকে। এ পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছরই সব ধরনের সবজি চাষ করতে পারেন। তাই অনেক কৃষকই এখন পলিনেট হাউস নির্মাণে ঝুঁকছেন।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, বারোমাসি সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউস দেশে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তিতে এক নতুন সংযোজন। পলিনেট হাউসে ফসল উৎপাদন ২৫ শতাংশ বেশি হয়। পাশাপাশি পোকামাকড়ের আক্রমণও ৭৫ শতাংশ কম হয়। প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এতে ফসলের উৎপাদন খরচ অত্যন্ত কম হবে। তাই এতে ফসল উৎপাদন সহজ হবে। পলিনেট হাউসের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ফলবে তেমনি মৌসুমি সবজিও যেকোনো সময় উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগও তৈরি হবে।
সুত্রঃ বাসস / এম ইসলাম