ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ৯০ ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানিকৃত খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে জুস, পানীয়, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, আলু, মুড়ি, চিড়া, মসলা, সিঙ্গাড়া, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, বাবল গাম, চানাচুর, ডাল ভাজা ও চিপস, কনফেকশনারি পণ্য, জ্যাম ও জেলি, বিভিন্ন ধরনের সস, কাসুন্দি, আলুপুরি, সবজির রোল, লুচি, সমুচা, জর্দা, হিমায়িত মাশরুম, বাদাম ভাজা, বিভিন্ন ধরনের চাটনি ও আচার, নুডুলস, বিভিন্ন ধরনের সেমাই, লুচি ও পরোটা, খেজুর রস, মধু, পাপড়, বিভিন্ন ধরনের হিমায়িত সবজি। বেশি রপ্তানি হয় জুস, পানীয়, বিভিন্ন ধরনের মসলা, মুড়ি, চাটনি, আচার, হিমায়িত সবজি ও সেমাই।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মরিশাস, ভারত, সুইডেন, গ্রিস, ক্যামেরুন, সাইপ্রাস, জাপান, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, ব্রুনাই, কুয়েত, ভুটান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইথিওপিয়া, বাহরাইন, গাম্বিয়া, গিনি, আইভরি কোস্ট, ইতালি, সিয়েরালিওন, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, সেনেগাল, নাইজার, নেপাল, পাকিস্তান, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এসব কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য। তবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের প্রধান প্রতিযোগী হচ্ছে ভারত। এছাড়া আছে ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিযোগী দেশগুলোর পণ্যের মান ও মোড়ক খুবই আকর্ষণীয়। এছাড়া তাদের পণ্যের দামও তুলনামূলক কম। তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া গেলে প্রতিযোগিতা করেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
বাড়ছে রপ্তানি: প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-০২ অর্থবছরে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার পণ্য। এরপর ২০১০-১১ অর্থবছরে রপ্তানি করে আয় হয় ৪৪৮ কোটি টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬শ’ কোটিতে। আর এই খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বড় ভূমিকা রাখছে প্রাণ, স্কয়ার, এসিআই, আজমি, ইউরেশিয়া, বোম্বে সুইটস, কাজী ফুডসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উত্পাদনের পাশাপাশি রপ্তানিও করছে।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, দেশে-বিদেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজার বাড়ছে। সেইসাথে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববাজারে আমাদের টিকে থাকতে হলে মানসম্মত পণ্যের উত্পাদনে জোর দিতে হবে। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বমানের ল্যাব নেই। যে কারণে বিদেশে পণ্য পাঠালে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্বমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রাণের বিপণন বিভাগের ওই পরিচালক আরও বলেন, শুধু প্রাণেই দশ লাখ মানুষ এ খাতে কাজ করছে। সবমিলিয়ে বিশ লাখ মানুষ এ খাতের সঙ্গে জড়িত। বিশ্ববাজারে ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের রপ্তানির কয়েকগুণ বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আহমেদ ফরহাদ বলেন, দ্রুত প্রসার ঘটছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজারের। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতের। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে তা দূর করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বেশির ভাগ কাঁচামালই আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। কিন্তু গ্যাসের অভাবে সেখানে শিল্প গড়ে উঠছে না। অথচ একই জায়গায় শিল্প গড়ে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে খুব দ্রুত এ খাতের বিকাশ লাভ করবে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক ঋণের সুদ এত বেশি যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা খুবই কঠিন। এছাড়া দেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরীক্ষাগার (ল্যাবরেটরি) নেই। বিএসটিআই (মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান) অনেক দেশেই স্বীকৃত না। তাই এ দেশের পণ্য বিশ্ববাজারে গেলে স্বীকৃত পরীক্ষাগার থেকে পুনরায় পরীক্ষা করাতে হয়। ফলে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অথচ দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অগ্রগতি ও এ খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে এসব বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক