কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : ল্যাংড়া, হিমসাগরের ভিড়ে গুটি আম ছিল অনাহূত অতিথির মতো। স্বাদে টক-মিষ্টি, ঘ্রাণ আহামরি কিছু নয়। বাজারে নিলে ক্রেতারা আগ্রহ দেখাতেন না। অনেক সময় বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে হতো। সেই ফেলনা গুটি আমেই এখন চাষিদের লাভ বেশি। কৃষকেরা বলছেন, নাটোরের ঘরে ঘরে এখন গুটি আমের চারা রোপণ করা হচ্ছে। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ গুটি আম উৎপাদিত হচ্ছে। সেই আম কিনে নিচ্ছে কৃষিপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ। নাটোরে কোম্পানিটির কারখানায় গুটি আমের রস বা পাল্প সংগ্রহ করে তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ম্যাঙ্গো ড্রিংক, জুস, আমসত্ত্ব, চাটনি, আচারসহ বিভিন্ন পণ্য।
জনপ্রিয় জাতের বিভিন্ন আমের তুলনায় গুটি আমের দাম অনেক কম। চাষিরা জানান, এ বছর এক কেজি ল্যাংড়া আম গড়পড়তা ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করা গেছে। বিপরীতে গুটি আম বিক্রি করা গেছে ২০ টাকা দরে। কিন্তু ল্যাংড়া, হিমসাগরের চেয়ে গুটি আমের ফলন প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ আমের ফলনে কোনো বাৎসরিক বিরতি নেই। সব মিলিয়ে কৃষকের কাছে গুটি আমই এখন বেশি লাভজনক। এ বছর প্রাণ প্রায় ৫০ হাজার টন আম সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে। গত ২৪ মে থেকে এই আম সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে আগামী আগস্ট পর্যন্ত। গুটি শেষ হলে কেনা হবে আশ্বিনা আম।
নাটোরে প্রাণের কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। গত বুধবার কয়েকজন সংবাদকর্মীকে কারখানা ও চুক্তিভিত্তিক চাষ দেখাতে নিয়ে যায় প্রাণ। কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের প্রায় ১৩ হাজার চুক্তিভিত্তিক আমচাষি আছেন। প্রতিবছর তাঁদের প্রশিক্ষণ ও আম পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর বাজার দরে সেই আম কিনে নেয় প্রাণ। এ বছর চাষিদের ‘সেক্সফেরোমেন ট্র্যাপ’ দেওয়া হয়েছে। যে পদ্ধতিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে পোকা দমন সম্ভব হচ্ছে। জেলার বাগাতিপাড়ার চকতকিনগর গ্রামের ১০৫ বিঘা জমির আমবাগানের মালিক শরিফুল ইসলাম জানান, তাঁর বাগানে বেশি উৎপাদিত হয় গুটি আম। এ বছর তিনি ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার গুটি আম বিক্রি করেছেন। মৌসুম শেষে সব জাতের আম মিলিয়ে বিক্রির পরিমাণ ২ কোটি টাকার কাছাকাছি হতে পারে। তিনি বলেন, একসময় গুটি আম ফেলে দিতে হতো। এখন সবাই এ জাতের আমের চারা রোপণ করছে।
প্রাণের কারখানায় প্রথমে আম এনে ফরমালডিহাইডের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হচ্ছে। আম বাছাই ও বোঁটা ফেলে দেওয়ার কাজ করছেন নারীরা। এরপর আমগুলো তুলে দেওয়া হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ব্যবস্থায়, যেখানে আম কয়েক দফা ধোয়ার পর রস বের করা হচ্ছে। সেই রসে ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদান আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে পরীক্ষাগারে। কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক হযরত আলী জানান, এ বছর আম প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য তাঁরা নতুন যন্ত্র এনেছেন। সেখানে আরও আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে পাল্প সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাল্প থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয় প্রাণের মুন্সিগঞ্জের কারখানায়। আমের মৌসুম শুরু হলে নাটোরের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। আম পাড়া, কারখানায় নেওয়া, সেখানে প্রক্রিয়াজাতকরণে বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়। কারখানার ভেতরে বোঁটা কাটা ও আম বাছাইয়ে নিয়মিত শ্রমিকদের বাইরেও প্রায় এক হাজার নারী শ্রমিক কাজ করেন বলে জানান প্রাণের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া নিয়মিতভাবেও অনেক নারী শ্রমিক কাজ করেন।
কৃপ্র/কে আহমেদ/এম ইসলাম