কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : কম্পোস্ট কথাটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ কয়েকটি জিনিস একত্রে মিশানো। কয়েকটি জিনিস একত্রে মিশিয়ে স্তরে স্তরে সাজিয়ে এ সার তৈরি করা হয়। জমির উৎপাদন ক্ষমতা এবং এর উপযুক্ত প্রকৃতি,গঠনও উর্বরতা সংরক্ষণ করা একান্ত আবশ্যক। কম্পোস্ট সার প্রয়োগে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন সন্তোষজনকভাবে বাড়ে অন্যদিকে মাটির উর্বরতা ঠিক রাখা যায়। তদুপরি রাসাযনিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়।
বর্ষাকালে দেশের আনাচে কানাচে খাল-বিল, ডোবা, নালায় বহুল পরিমাণে কচুরিপানা পাওয়া যায়। কম্পোস্ট তৈরীর কাজে কচুরিপানা একটি উৎকৃষ্ট উপাদান। এর সাথে আগাছা, শস্যের অবশিষ্টাংশ, লতাপাতা, জংলা, পালানের উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। কম্পোস্ট তৈরির মাল মসল্লার অভাবে একটি মাত্র জিনিস দিয়েও কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। তবে সারের গুণগত মান বাড়াতে হলে হরেক রকমের জিনিস দিয়ে কম্পোস্ট তৈরী করা উচিত। উদাহরণস্বরুপ, কচুরিপানায় পটাসিয়ামের আধিক্য রয়েছে আবার আখ পাতায় নাইট্রোজেন বেশি রয়েছে। কাজেই এ দু’টো একত্রে মিশিয়ে সার তৈরি করলে উন্নত মানের কম্পোস্ট পাওয়া যাবে আবার হরেব রকম আবর্জনা মিশালে খাদ্য উপাদানের পরিমাণ আরও বাড়বে।
কম্পোস্ট সার সব রকম ফসলে ব্যবহার করা যায় তবে ধান, পাট, আখ, আলু, ভূট্টা, গম ও শাক-সবজির জন্য ইহা বিশেষ ফলদায়ক। বেলে দো-আঁশ, মধুপুর গড়, বরেন্দ্রভূমি, লাল মাটি এবং পাহাড়ি এলাকার মাটির জন্য বিশেষ উপযোগী। এ সার জমিতে ছিটিয়ে দেয়ার পরই জমি চাষ দিয়ে বা কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে প্রয়োগ করার সময় যদি কম্পোস্ট ভালোভাবে না পচে থাকে তাহলে বপন বা রোপণের ২-৪ সপ্তাহ আগে কিছু পরিমান ইউরিয়া সহযোগে চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগের সময় এই পরিমান ইউরিয়া কম ব্যবহার করা যায়।
কম্পোস্ট প্রস্তুত পদ্ধতি:
কম্পোস্ট তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। হাচিনসন ও রিচার্ড নামে দু’জন বিজ্ঞানী ১৯২১ সালে সর্ব প্রথম কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করেন। এরপর ফাউলার, হাওয়ার্ড, ওয়ার্ড এবং আচার্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতি প্রদর্শন করেছেন। নিম্নে সেগুলো সর্ম্পকে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো –
১. এডকো পদ্ধতি: এটি কম্পোস্ট তৈরির সবচেয়ে পুরাতন পদ্ধতি। হ্যাচিনসন ও রিচার্ড এ পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। শস্যের উচ্ছিষ্ট অংশ, আগাছা ইত্যাদির সাহায্যে প্রায় পৌনে দুই মিটার উঁচু একটি স্তুপ করা হয়। সারের স্তুপে প্রতি ১০০ কেজি শুষ্ক পদার্থে জন্য ৭ কেজি এডকো পাউডার ব্যবহার করতে হয়। এ পাউডারই সার পচনক্রিয়ার সূত্রপাত করে থাকে।
২. একটিভ কম্পোষ্ট পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে ফাউলার ও রেজ (১৯২২) আবর্জনা সার প্রস্তুতের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ইহাতে প্রভাবক হিসেবে গোবর সার, সিউয়েজ, স্লাজ প্রয়োগ করা হয়।
৩. ইন্দোর পদ্ধতি: ভারতে ইন্দোরে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব প্লান্ট ইন্ডাষ্ট্রিতে হাওয়ার্ড এবং ওয়ার্ড সর্বপ্রথম এ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করেন। এতে প্রভাবক হিসেবে গোবর ব্যবহার করা হয়।
৪. বাঙালোর পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে মাটিতে গর্ত খনন করেঃ শহরাঞ্চলের আবর্জনা দিয়ে কম্পোস্ট প্রস্তুত করা হয়। আবর্জনার উপর মানুষের মল প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইন্সে সি,এন,আচার্য প্রথম এ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করেন।
৫. আদর্শ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরি: উপরে বর্ণিত কম্পোস্ট তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি আলোকে এবং কতকটা দেশীয় নিয়মে কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করা হয়। কম্পোষ্ট সার প্রস্তুতের এ পদ্ধতিকে আদর্শ পদ্ধতি বলা হয়। এ পদ্ধতিই আমাদের দেশে সমধিক প্রচলিত এবং জনপ্রিয়। এ দেশে সাধারণতঃ দু’ভাবে কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়- যথা (ক) স্তুপ প্রণালী ও গর্ত প্রণালী।
(ক) স্তুপ বা গাদা পদ্ধতি: অতি বৃষ্টিপাত এলাকায় বা বর্ষাকালে এ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির সুপারিশ করা হয়। এ পদ্ধতিতে সার তৈরি করা অন্যান্য পদ্ধতি সমূহ অপেক্ষা সুবিধেজনক। এতে মূল উপাদান হিসেবে কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়।
কৃপ্র/কে আহমেদ/এম ইসলাম