কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ভাগ্য বদলে দিয়েছে দৌলাতদিয়াড় গ্রামের যুবক মফিজুর রহমান মাফুজের (৩২)। তিনি শহরতলী দৌলাতদিয়াড় গ্রামের মৃত আবু বক্কর মোল্লার ছেলে। মাফুজ জানান, ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পুঁজি খাটিয়ে বর্তমানে তিনি ৮০/৮৫ লাখ টাকার মালিক। নিজের সাফল্য আর দেশের কৃষিকে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক থেকে মুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ করছেন। নিজের অতীতের কথা স্মরণ রেখে জেলার দরিদ্র কৃষকদেরকে বিনামূল্যে পরামর্শ ও ভার্মি কম্পোস্ট বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছেন তিনি।
মাফুজ আরও জানান, ২০০২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি এক বিষয়ে অকৃতকার্য হন। তারপর লেখাপড়ার প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়। তখন তিনি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য গরু ও মুরগির খামার গড়ে তোলেন। কিন্তু ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময় অতিরিক্ত গরমে একদিনেই তার আড়াই হাজার মুরগি মারা যায়। গরুর খামারটিও নষ্ট হয়ে যায়। আবার হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। প্রায় তিন বছর এভাবে থাকার পর নতুন উদ্যোমে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নামেন। এ সময় পরিচয় হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির প্রকল্প পরিচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তাই পরামর্শে ২০০৭ সালের শুরুতে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন।
মাফুজ বলেন, ‘ভারত থেকে প্রতিটি তিন টাকা দরে ১ লাখ ২৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান কেঁচো কিনে শুরু করি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের কাজ। সব রকম পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক নজরুল ইসলাম।’
নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ৫০ পয়সা পিস হিসেবে প্রায় ৫০ লাখ টাকার কেঁচোসহ মাফুজের পুঁজি ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টাকা। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে সার উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত সারের নাম দিয়েছেন ‘মা এগ্রো ভার্মি কম্পোস্ট’।
কেঁচো সার প্রস্তুত বিষয়ে মাফুজ বলেন, এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রথমে গোবর সংগ্রহ করতে হয়। এর গ্যাস দূর করার জন্য ৭-৮ দিন খোলা জায়গায় ফেলে রাখতে হয়। এরপর বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত ড্রেনের ভিতর গোবর ফেলে পরিমাণমত কেঁচো ছেড়ে দিতে হয়। দুই সপ্তাহ পর নেটে চালাই করে কেঁচো সার আলাদা করা হয়।
বর্তমানে মাফুজের মা এগ্রো কেঁচো সার কারখানায় প্রতি ১৫ দিনে গড়ে প্রায় ১০ টন সার উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য ১ লাখ টাকার উপরে। এছাড়া কেঁচো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করায় সেই কেঁচো বিক্রি করেও বাড়তি আয় করা সম্ভব। মাফুজের উৎপাদিত সার নিজ জেলায় বিক্রির পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম