কুষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশের সব জেলাতেই কম-বেশি নারিকেল জন্মায়। তবে উপকূলীয় জেলাসমূহে নারিকেলের উৎপাদন বেশি হয়। নারিকেলের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, চর্বি, শর্করা ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া ডাবের পানি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। তাই পানীয় ও খাদ্য হিসেবে নারিকেলের প্রচুর চাহিদা আছে।
নারিকেল চাষ : দেশের সব জেলাতেই কমবেশি নারিকেল জন্মায়। তবে উপকূলীয় জেলাসমূহে বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও যশোর জেলায় নারিকেলের উৎপাদন বেশি হয়।
পুষ্টিগুণ : নারিকেলের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, চর্বি, শর্করা ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।
ঔষধিগুণ : বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যায় ডাবের পানি খুবই উপকারী।
বাজার সম্ভবনা : ডাবের পানি ও নারিকেলের শাঁস অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। বিভিন্ন রান্নায় নারিকেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নারিকেল দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু পিঠা, মোয়া ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তাই পানীয় ও খাদ্য হিসেবে নারিকেলের প্রচুর চাহিদা আছে। গৃহ নির্মাণ সরঞ্জাম, পশু খাদ্য ইত্যাদি উপকরণ নারিকেল থেকে পাওয়া যায়। নারিকেলের গাছের পাতা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নারিকেল গাছের প্রতিটি অংশই কোন না কোন কাজে লাগে। তাই নারিকেল চাষ করে পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ও করা সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
জলবায়ু : জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময় নারিকেল চাষের উপযুক্ত সময়।
মািটির প্রকৃতি : নারিকেল গাছের জন্য নিকাশযুক্ত দো-আঁশ থেকে পলি দো-আঁশ মাটি সবচে উত্তম।
জাত : বারি নারিকেলে-১ প্রতিটি ফলের ওজন ২৭০ গ্রাম থেকে ১৪০০ গ্রাম । পানির পরিমান ২৭০ থেকে ২৯০ মিলি . শাঁসের ওজন ৩৭০ থেকে ৩৯০ গ্রাম তেলের পরিমান শতকরা ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ । বারি নারিকেল -২ প্রতিটি নারিকেলের ওজন ১.৫ থেকে ১.৭ কেজি, পানির পরিমান ৩৩০ থেকে ৩৪৫ মিলিলিটার , শাঁসের ওজন ৩৫০ থেকে ৩৭০ গ্রাম , তেলের পরিমান শতকরা ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ।এছাড়াও টিপিকা সবুজ, টিপিকা বাদামী ও দুধে জাতের নারিকেলের চাষ হচ্ছে।
চারা রোপণ পদ্ধতি : ১. ৮ মি.X ৮ মি. দূরে চারা রোপণ করতে হবে। ২. চারা রোপণের আগে ১ মি. X ১ মি. X ১ মি. মাপের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে।
সার প্রয়োগ : কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে নারিকেল চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
সেচ ও নিষ্কাশন : শুষ্ক মৌসুমে ১৫ দিন পর পর ২ বার সেচ দিতে হবে। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ফল সংগ্রহ : কচি অবস্থায় ফলের রঙ সবুজ হয়। পাকা অবস্থায় নারিকেলের রঙ খয়েরি হয়। তখন নারিকেলের গায়ে চুলের মত চিকন দাগ পড়ে। তখন ফল সংগ্রহ করতে হবে।
উৎপাদিত ফলের পরিমাণ : বারি নারিকেল-১ ও বারি নারিকেল-২ গাছে গড়ে ৬৫-৭৫ টি ফল ধরে। এছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪০০ কেজি নারিকেলের ফলন হয়।
মূলধন : এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে নারিকেল চাষের জন্য প্রায় ৫০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ : নারিকেল চাষের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে নারিকেল চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/এম ইসলাম