কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নার্সারীর ব্যবসা করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন মো. বারেক। ভোলা সদর উপজেলা ধনীয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের আলগী এলাকায় নিজ বাড়ির পাশে প্রায় পৌনে এক একর জমিতে গড়ে তুলেছেন রাঙ্গাবন নার্সারী। এক সময়ে অনেক অর্থকষ্টে থাকলেও বারেক বর্তমানে সফল নার্সারী ব্যবসায়ী। স্ত্রী, ছেলে ও পরিবার নিয়ে সুখে রয়েছেন তিনি। জানা যায়, আজ থেকে ২৫ বছর আগে বারেক সামান্য পুঁজি নিয়ে নার্সারীর ব্যবসায় নামেন। প্রথম দিকে স্বল্প কিছু ফলজ গাছ উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। খুব একটা লাভ না হলেও কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ধীরে ধীরে তার অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। একইসাথে নার্সারীর পরিসরও বাড়তে থাকে তার। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে বর্তমানে একটি আদর্শ নার্সারীতে রুপ নিয়েছে বারেকের রাঙ্গাবন নার্সারী। অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন তার হাতে গড়া সবুজের সমাহার দেখে। আবার কেউ কেউ বারেকের মত নার্সারী করে স্বাবলম্বী হবার চেষ্ট করছেন।
শহরের অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীরা তার এখান থেকে গাছের চারা কিনে থাকেন। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও পাইকারিভাবে গাছের চারা বিক্রি করা হয়। এখান থেকেই পাইকাররা ভ্যানে অথবা গাড়িতে করে গাছের চারা কিনে নেন। আবার কখনো কখনো জেলার বাইরের অন্য জেলায় পাইকারদের সাথে গাছ বিক্রির চুক্তি হয়। তখন লঞ্চ, ট্রলার অথবা নৌকায় করে চারা পৌঁছে দেয়া হয় গন্তব্যে। যেহেতু এখন বর্ষাকাল বৃক্ষ রোপনের উৎকৃষ্ট সময়, তাই গাছের পরিচর্যায় অধিক সময় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে। সারাক্ষণ বৃক্ষের সবুজের মধ্যে ডুবে থাকতে হচ্ছে তাকে। এই সময়টাতে টার্গেট করে মাঠে নামেন নার্সরী ব্যবসায়ীরা।
বারেক জানান, ঢাকার সাভার, চট্রগ্রাম, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী এলাকা থেকে গাছের বীজ ও চারা সংগ্রহ করে থাকেন। সাধারণত বীজ, কলম ও কাটিং এই ৩ উপায়ে চারা উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে কাঠ ও ওষুুধি গাছ শুধু বীজ থেকে করা হয়। আর ফুলের গাছ বীজ, কলম ও কাটিং ৩ মাধ্যমেই করা যায়। চলতি আষাঢ়-শ্রাবণ ২মাসে ২ লাখ টাকা লাভের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন বলে বারেক জানান। বারেক আরো জানান, প্রথমে পলিব্যাগে মাটি প্রস্তুত করে বীজ অথবা চারা রোপন করতে হয়। এ জন্য মাটিতে পরিমিত টিএসপি, গোবর, পটাস, খৈল দিয়ে ১ সপ্তাহ রাখতে হয়। সাধারণত ফুল, ফল ও পাতাবাহার গাছ ২০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। এ ছাড়া কাঠ ও অন্যান্য ফলের চারা প্রকার ভেদে ৩ মাস থেকে ৮মাস সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যায়। বর্ষা মৌসুমে কাঠ ও ফলের গাছ বেশি বিক্রি হয়। আর শীতের সময় ফুল গাছের বিক্রি বেড়ে যায়।
আলগী এলাকায় বারেকের নার্সারীতে গিয়ে মুগ্ধ হতে হয়। দুই পাশে অসংখ্য ছোট বড় সারি সারি সবুজ গাছের সমাহার। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের গাছের চারাই এখানে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে আম, জাম, লিচু, জামরুল, আমড়া, পেয়ারা, জলপাই, কতবেল, আমলকি, লেবু, মাল্টা, বড়ই, কামরাঙ্গা, ডালিম ইত্যাদী অন্যতম। এছাড়া ফুলের গাছগুলো অপরুপ শোভা বৃদ্ধি করেছে এখানে। ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, বেলী, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, বকুল, শিউলী, গাধা, গন্ধরাজ, মোসেন্ডা, টগর, আলবেন্ডা, জুঁই, কচমচ, চন্দ্রমল্লিকা, সিলপিয়া, ডালিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা। বনজ গাছের মধ্যে রেইনট্রী, মেহগনী, আকাশমনী, চাম্মুল, নারকেল, সুপারী, লাম্মু ইত্যাদী।
ওষুধি গাছ রয়েছে নিম, হরতকি, বয়রা, অর্জুন, এলোভেরা ইত্যাদি। বারেক আরো জানান, পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় তার নার্সারীর অরেকটি শাখা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেখানেও কয়েক হাজার বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রয়েছে। শহরের শাখা থেকেই মূলত বড় বড় অর্ডার আসে চারা বিক্রির এখানে। তিনি বলেন, এক সময় অভাবে থাকলেও এখন পরিবার নিয়ে সুখে রয়েছেন। আগে টিনের ঘর থাকলেও এখন পাকা দালান তুলেছেন। বছরে এখন তার কয়েক লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান বারেক। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. এমদাত হোসেন কবির বলেন, রাঙ্গাবন নার্সারীতে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এখানে একসাথে বহু ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায়। বারেক এলাকায় তার নার্সারীর মাধ্যমে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একজন মানুষ কোন কাজকে ভালোবাসলে বা তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করলে যে সফল হওয়া যায়Ñ বারেক তাই প্রমাণ করেছেন রাঙ্গাবন নার্সারীর মাধ্যমে।
সুত্রঃ বাসস