কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষির জন্য প্রদত্ত বরাদ্দকে অপর্যাপ্ত ও আত্মঘাতী বলে অভিহিত করেছেন অধিকার ভিত্তিক নাগরিক সমাজ। তারা বলেছেন, বাজেটে কৃষি ও কৃষকের বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগের দিক নির্দেশনা নেই। তারা বাজেটে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষিপণ্য ন্যায্যমূল্য কমিশন গঠনের দাবি জানান।
সম্প্রতি জাতীয় প্রেস কাবে অনুষ্ঠিত ‘বাজেট ২০১৬-১৭ : কৃষির জন্য বরাদ্দ এবং খাদ্যনিরাপত্তার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। ইকুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ (ইকুইটিবিডি), ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর পোভার্টি ইরাডিকেশন (এসএএপিই) ও এমটিসিপি-২ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইকুইটিবিডির মো: মজিবুল হক মনির। সিএআরএলের সাধারণ সম্পাদক শারমিন্দ নিলর্মীর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য টিপু সুলতান, সংসদ সদস্য এবং শ্রম কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম, সংসদ সদস্য ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সুবল সরকার, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জায়েদ ইকবাল খান, সিএসআরএলের প্রদীপ কুমার রায়, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের গোলাম সরওয়ার, সিএসআরএলের ড. জাহাঙ্গীর আলম।
মো: মজিবুল হক বলেন, গত অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৪.২১%, অথচ আগামী অর্থবছরের জন্য এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ৪.০১%। মোট বাজেটের আকার বাড়লেও কৃষির জন্য বরাদ্দ কমে গেছে ০.১৯%। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ ৩০ কোটি টাকা বাড়লেও, মোট বরাদ্দের আনুপাতিক হার কমে গেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মোট বরাদ্দের ১.৭% বরাদ্দ আছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য, গত অর্থবছরেও এই বরাদ্দ ছিল ২%। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৩.১০% বরাদ্দ ছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য। সেটা কমতে কমতে এখন ১.৭% এ দাঁড়িয়েছে। কৃষককে ১ টাকা ভর্তুকি দিলে কৃষক ১৫ টাকা ফেরত দিতে পারেন। গত বছর কৃষি খাতে ভর্তুকির জন্য ৯০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও খরচ করা হয়েছে ২০০০ কোটি টাকা কম, ৭০০০ কোটি টাকা। এবারো ৯০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অপ্রতুল।
ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষি ভর্তুকি নগদ কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। গ্রামে গ্রামে ক্রয়কেন্দ্র করে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করতে হবে। সুবল সরকার বলেন, গত বছরের মতো এই বছরেও বছরজুড়ে অলোচনায় ছিল কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যের বিষয়টি। সম্প্রতি গরুর গোশতের দাম বাড়ায় এক মণ ধান দিয়েও এক কেজি গরুর গোশত কেনা প্রায় কঠিন হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকের জন্য। এক মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ৬০০-৮০০ টাকা, সেখানে কৃষক এর জন্য দাম পাচ্ছেন ৩০০-৫০০ টাকা। বাজেটে এই সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।
সংসদ সদস্য টিপু সুলতান বলেন, দেশ প্রতি বছর ১% করে কৃষিজমি হারাচ্ছে, কৃষিজমির অকৃষি খাতে ব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। উপকূলীয় এলাকার কৃষক বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে কৃষিজমি হারাচ্ছেন, তাদের রক্ষায় উপকূল এলাকায় বাঁধ নির্মাণও জরুরি। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা যে হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করি, এগুলোর জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় যা আমাদের জমির উর্বরতা কমাচ্ছে। এ অবস্থার অবসান করা না গেলে মঙ্গা বা খাদ্যাভাব আবার ফিরে আসবে। দেশীয় বীজ রক্ষা করতে হবে। সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণের সামর্থ্য অনেক কৃষকের নেই। এক্ষেত্রে কৃষককে সহায়তা করতে হবে। বাজারজাতকরণে সমস্যা রয়েছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা পাচ্ছে। কৃষি পণ্যের রফতানির ক্ষেত্রে কৃষকের অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ধান সংগ্রহ ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। কৃষকের কাছে যখন ধান থাকে, তখনই ধান ক্রয় করতে হবে। চাল না কিনে সরকার ধান কিনলে কৃষক বেশি উপকৃত হতো। কৃষি উৎপাদনের যন্ত্রাংশ বিত্তবান কৃষকেরা ছাড়া, সাধারণ কৃষকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তাই সাধারণ কৃষকতে স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে এই যন্ত্রাংশগুলো পৌঁছে দিতে হবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম