কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বর্তমানে স্বাদুপানির দেশীয় প্রজাতির ৫৪টি মাছের অবস্থা সংকটাপন্ন৷ উপকূলীয় মত্স্য সম্পদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরার প্রকোপ, অতিবৃষ্টি ও বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লোনা পানির অনুপ্রবেশ এবং জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা বৃদ্ধি। খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দিঘীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে জলাশয়গুলোতে পানির স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে বিশেষকরে দেশের উত্তরাঞ্চলে৷ শুস্ক মৌসুমে মাছের উত্পাদন হ্রাস পাচ্ছে ও পানির অভাবে মাছের আশ্রয়স্থল সংকুচিত হবে এবং প্রজননক্ষম মাছের পরিমান হ্রাস পাচ্ছে৷ উন্মুক্ত জলাশয়ে বসবাসকারী কিছু প্রজাতির মাছ আবাসস্থল পরিবর্তন করছে ৷
মাছের প্রজনন ও অভিপ্রয়ানের সময় পরিবর্তনের ফলে মাছ ও চিংড়ির প্রজাতি বৈচিত্র্য ও প্রাপ্যতা কমতে শুরু করবছে৷ ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ও চিংড়ির মাইগ্রেশন এ ব্যঘাত ঘটবে এবং ফিসিং গ্রাউন্ডের পরিবর্তন হচ্ছে ৷ বিল, খাল, নদী, হাওড় শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এর অধিকাংশ কৃষি জমিতে রুপান্তরিত হচ্ছে , ফলে মাছের আবাস সংকুচিত হচ্ছে ৷ হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে৷ ফলে স্বাদুপানির মাছের প্রজাতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ দীর্ঘ সময় ধরে খরা থাকলে মাছের শুক্রাশয় বা ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটছে এবং মাছের জৈবিক প্রক্রিয়ায় সমস্য দেখা দিচ্ছে৷ খরার প্রকোপ বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি ও বন্যা, লোনা পানির অনুপ্রবেশ ও জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রতিষ্ঠিত মত্স্য অবয়াশ্রমগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে ৷ মাছের প্রাকৃতিক ও আহরণজনিত মৃত্যুহার বাড়বে এবং মত্স্যকূলের প্রজননে ব্যঘাত সৃষ্টি হচ্ছে৷
বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি বালি পড়ে বিল, খাল, নদী, হাওর-বাওড়ের নব্যতা হারাচ্ছে ও মাছের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে৷ সাগর ও উপকূলের ইলিশ মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটছে৷ উপকুলীয় এলাকার চিংড়ির ঘের ও মাছের পুকুর তলিয়ে পাড় ভেঙ্গে পুকুর, ঘেরের পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ নষ্ট হয়ে জলাশয়ের উত্পাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে এবং মাছ ও চিংড়ির উত্পাদন হ্রাস পাচ্ছে। মাছ ও চিংড়ির প্রজাতি বৈচিত্র্য ও প্রাপ্যতার পরিবর্তন ঘটছে৷
অতি বন্যায় পুকুর ভেসে পুকুরে চাষকৃত বিদেশী ও রাক্ষুসে মাছ উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রবেশ করে জলজ জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট করছে, বাহিরের রাক্ষুসে ও অন্যান্য মাছ পুকুরে প্রবেশ করে মাছের নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে৷ এছাড়া বাহিরের ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করে পুকুরের পানিতে রোগ জীবানুর প্রকোপ বেড়ে পুকুরের চাষকৃত মাছের মড়ক দেখা দিচ্ছে। সামুদ্রিক মত্স্য সম্পদ, বিশেষকরে প্যারাবন ও কোরাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে নানা জাতের মাছ, চিংড়ি ও কাঁকড়ার প্রজনন ও নার্সারিক্ষেত্র নষ্ট হয়ে এসবের উত্পাদন ক্ষতিগ্রস্থ হবে৷
প্রতিকার হিসাবে মাছের আবাসস্থল সম্প্রসারিত করতে হবে।খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দিঘী ও হাওর-বাঁওড় খনন পুনঃখনন বা সংস্কার করে জলাশয়ের গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে। জলাশয়ের গভীরতম অংশে মত্স্য অভয়াশ্রম স্থাপন করে শুস্ক মৌসুমে মাছের মজুদ রক্ষা করা প্রয়োজন৷ এতে করে বর্ষা মৌসুমে প্রজননক্ষম মাছের পরিমান বৃদ্ধি পাবে এবং সংকটাপন্ন বা বিপন্ন প্রজাতির মাছের মজুদ বৃদ্ধি পাবে৷ পুকুরের পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে অথবা ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্স থেকে বা অন্য কোন উত্স থেকে পুকুরের পানির সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে৷
চিংড়ি ঘের ও পুকুরের পাড় উচু ও মজবুত করতে হবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে লোনা পানি সহনশীল মাছ ভেটকি, টেংরা, চিংড়ি, কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে৷ খরা প্রবণ এলাকায় মাছ চাষের পরিবর্তন এনে মৌসুমী চাষ পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে যেমন- তেলাপিয়া চাষ, পাংগাস চাষ, কৈ, শিং, মাগুর মাছ চাষ ইত্যাদি।
কৃপ্র/এম ইসলাম