কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ খুলনার পাইকগাছায় বাংলাদেশ মৎস্য ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা পারশে মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল সফলভাবে উদ্ভাবন করেছেন খুলনার পাইকগাছায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট লোনাপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পারশে মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এটা দ্বিতীয় সাফল্য। পারশে মাছ লোনাপানি অঞ্চলের অতি সুস্বাদু, জনপ্রিয় এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আগে এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ছিল লিজা সাবভিরিডিজ এবং বর্তমান বৈজ্ঞানিক নাম চেলন সাবভিরিডিস । অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এ মাছের যথেষ্ট চাহিদা। সাধারণত অগভীর উপকূলীয় জলাশয়ে, খাড়ি অঞ্চলে এবং প্যারাবনের জলাশয়ে এ মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
পারশে মাছের প্রজননস্বভাব অন্যান্য মাছের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। প্রাকৃতিক পরিবেশে সাধারণত শীত মৌসুমে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) এ মাছ অধিক লবণাক্ত পানিতে সমুদ্রে প্রজনন সম্পন্ন করে। উচ্চ গুণগতমানসম্পন্ন মাংস, অধিক তাপমাত্রা ও লবণসহনশীলতা এবং অপ্রাণীভোজী স্বভাবের কারণে উপকূলীয় ঘেরে এ মাছ চাষের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাষের জন্য বর্তমানে চাষিরা প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে পারশে মাছের পোনা সংগ্রহ করছে। অতীতে প্রাকৃতিক জলাশয়ে এবং চিংড়ি ঘেরে এ মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেত।
কিন্তু নির্বিচারে আহরণ ও পরিবেশগত কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে এ মাছের প্রাপ্যতা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে লোনাপানির গুরুত্বপূর্ণ এ মাছের সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ সরবরাহ বৃদ্ধির নিমিত্ত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষাবাদের পদ্ধতি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের খুলনার পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পারশে মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের জন্য কয়েক বছর ধরে নিরলস গবেষণা করছেন। আগের গবেষণার মাধ্যমে লব্ধ ধারণার ওপর ভিত্তি করে চলতি শীত মৌসুমে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পারশে মাছের পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে বলে গবেষকরা জানান। পরিপক্ব পারশে মাছ অপ্রাণীভোজী হলেও ডিম থেকে প্রস্ফুটিত পোনার ডিম্বথলি নিঃশেষ হওয়ার পর পোনার প্রাথমিক খাদ্য হিসেবে অতি ক্ষুদ্র জীবন্ত প্রাণীকণা খেয়ে এরা বড় হয়ে ওঠে। তাই হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননের আগে পারশে মাছের পোনার ভক্ষণযোগ্য অতি ক্ষুদ্র প্রাণীকণার চাষ এবং এ প্রাণীকণার খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য এককোষী উদ্ভিদকণা চাষ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে।
হ্যাচারিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীকণা চাষ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টার কর্তৃক কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। লোনাপানি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস বি সাহা জানান, ২০০৬-০৭ মেয়াদে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের খুলনার পাইকগাছার লোনাপানি কেন্দ্র কর্তৃক কোর গবেষণা প্রকল্পের আওতায় লোনাপানি অঞ্চলের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছগুলোর প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা শুরু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রজননক্ষম সুস্বাদু নোনা টেংরা (গুংঃঁং মঁষরড়) মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রদান করেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম