কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু টেকসই নগরায়নের জন্য পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়নের ধারা জোরদারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ নগরে বসবাস করবে। এ বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য পরিবেশবান্ধব শিল্পপণ্যের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কার্যকর সবুজ প্রযুক্তি স্থানান্তর জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। শিল্পমন্ত্রী আজ দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান শহরে ‘টেকসই শহরের জন্য সবুজ শিল্প’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন। চতুর্থ সুবজ শিল্প সম্মেলন উপলক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
কোরিয়া সরকারের বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা, দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান মেট্রোপলিটন সিটি এবং কোরিয়ান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের অন্যান্যের মধ্যে আফগানিস্তানের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হুমাউন রাশো, কম্বোডিয়ার শিল্প ও হস্তশিল্পমন্ত্রী চাম প্রাসিদ, ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী হুয়াং কুয়াক ভং, জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিলিপ স্কটসহ বিভিন্ন দেশের উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প উদ্যোক্তা, নগরবিদ, শিক্ষাবিদ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ আলোচনায় অংশ নেন।
প্যানেল আলোচনায় শিল্পমন্ত্রী পরিকল্পিত নগরায়ন ও সবুজ শিল্পায়নের ধারা জোরদারে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে শিল্প সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকার শিল্প দূষণ থেকে পরিবেশ ও নগর সুরক্ষায় প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ‘উদ্দীষ্ট জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান’ শীর্ষক কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছে। এর আলোকে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, পরিবহন এবং শিল্পখাতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে জ্বালানি সাশ্রয় ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে ইতোমধ্যে ৪০ লাখ বাড়িতে সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, শিল্প কারখানায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ‘ক্লিনার প্রোডাকশন সিস্টেম’ চালুর পাশাপাশি সকল শিল্পপার্ক ও ইপিজেডে ‘গ্রিনসেল’ চালু করা হয়েছে।
আমির হোসেন আমু বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা করে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরি প্রভাব মোকাবেলা করে বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজ বেষ্টনী স্থাপন, সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ সুরক্ষায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘চ্যাম্পিয়ান অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা শিল্প ও নগরের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক, দক্ষতা সম্পদ, সবুজ প্রযুক্তি এবং ইকো-উদ্ভাবনের বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার, উচ্চ উৎপাদনশীলতা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে অভিন্ন শিল্প ও নগরনীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। তারা শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় কার্বন দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে সম্মিলিত দাবি জোরদারের সুপারিশ করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা বলা হয়।
সুত্রঃ বাসস