কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নতুন জাতের ড্রাগন ফল চাষ করে সফল হয়েছেন মাগুরা সদর উপজেলার রাওতড়া গ্রামের কৃষক শওকত হোসেন । মাত্র ৪০ শতক জমিতে ড্রাগন চাষে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা করে ইতিমধ্যে তিনি ৪০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন। তার বাগান থেকে কমপক্ষে দুই লাক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। এটি লাগানোর পর শুধু জৈব সার ব্যবহার করে অনেকটা বিনা খরচে তার এ সফলতা এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলার পাশাপাশি ভাগ্যবদল হতে শুরু করেছে কৃষক শওকতের। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসছেন তার ড্রাগন বাগান দেখতে। শওকত হোসেন জানান, ‘আগে তিনি ধান, পাট, সরিষা, মসুর এর মত গতানুগতিক চাষাবাদ করতেন। কিন্তু তাতে তেমন লাভ হতো না। এক পর্যায়ে পেঁপে পেয়ারা চাষ শুরু করেন। তাতেও খরচের তুলনায় লাভ কম। তারপর পোকা মাকড় ও রোগ বালাইয়ে কারণে এসব ফসল চাষ নিয়ে যখন বিপাকে ছিলেন, তখন মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ আমিনুল ইসলাম বিদেশী ফল ড্রাগন চাষের পরামর্শ দেন।
তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় নিজ ৪০ শতক জমি নির্বাচন করে ড্রাগন বাগান গড়ার পরিকল্পনা করেন।
২০১৪ সালে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বিনা মূল্যে পাঁচ শত ড্রাগন চারা ও শতাধিক সিমেন্টের পিলার নিয়ে বাগান তৈরি করেন। ক্ষেত তৈরি, গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করতে তার মাত্র কুড়ি হাজার টাকা খরচ হয়। পরে বছর থেকেই গাছে ড্রাগন ফল অসতে শুরু করে। প্রথমবার ফলা অল্প সংখ্যক ফল তিনি নিজের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশির মাঝে বিলি করেন। এ বছর প্রায় প্রতিটি গাছে অসংখ্য ফল ধরেছে। গেল জুন মাসের শুরু থেকে তিনি গাছ থেকে পাকা ড্রাগন ফল তুলতে শুরু করেছেন। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ কেজি করে ড্রাগন পাচ্ছেন। ঢাকার ব্যাপারীরা বাগান থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অগ্রীম টাকার ভিত্তিতে গাড়ীতে করে ঢাকায় পাঠনো হচ্ছে। স্থানীয় বাজারেও ড্রাগন ফলের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। গত জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে একই ধরনের ফল পাওয়া যাবে। যা থেকে তিনি এ মৌসুমে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশাবাদী’।
শওকত জানান, ‘নতুন ফলে লাভ বেশি হওয়ায় প্রতিদিন অনেক মানুষ এসে তার বাগানে ভিড় করছেন। তার দেখাদেখি এ বছর এলাকার অরো ৪-৫ পাচজন কৃষক ড্রাগন বাগান করেছেন। ফলের পাশাপাশি সারাদেশে এ চাষ ছড়িয়ে দিতে এ বছর থেকে তিনি চারা উপাদন শুরু করেছেন’। মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের পরিচালক উদ্যানতত্ত্ববিদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মেক্সিকান এ ফল বর্তমানে এশিয়ার চায়না, মালোশিয়া ও শ্রীংঙ্কা ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষ উপযোগী। প্রচন্ড খরায় একবার সেচ ও জৈব সার দেওয়া ছাড়া ড্রাগন চাষে কোন বাড়তি খরচ নেই। রোগ বালাই মুক্ত ড্রাগন গাছ একবার লাগালে শুধু পরিচর্যা করলে ৩০-থেকে ৪০ বছর এক নাগাড়ে ফল দেয়। জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে ফল পাওয়া যায়। এ ফল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাগুরা হর্টিকালচার থেকে চারা নিয়ে যে কেউ ড্রাগন চাষ করতে পারেন’। ‘ড্রাগন ফল মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের হয়ে থাকে। এ ফলে নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিশেষ করে এ ফল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপ, কলেস্টোরোল ও শরীরের চর্বি কমায়। যে কারণে বাজারে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান, অমিনুল ইসলাম’।
সুত্রঃ বাসস