কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ: সারা দেশে পানির অভাবে চাষিরা পাট পচাতে পারছেনা। যেসব অঞ্চলে পাট কাটার সময় পাট পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি থাকে না সে সব অঞ্চলে অপর্যাপ্ত পানি থাকলে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানো যায়। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট রিবন রেটিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। আমাদের দেশে পাট পচানোর সময় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে খালবিলে পাট পচানোর মত পর্যাপ্ত পানি না থাকায় অল্প পানি দিয়ে পাটের ছাল পচানোর পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় রিবন রেটিং খুব উপযোগী। পাটের ছাল ছাড়ানো সহজ ও খরচ কম। ইহা পরিবেশসম্মত। পাটের আঁশের গুণাগুণ নির্ভর করে পাট পচানোর উপর। আঁশের গুণাগুণের উপর দাম নির্ভর করে।
ছাল ছাড়ানোর পদ্ধতিঃ ১.প্রথমে ৬ ফুট এক খণ্ড বরাক বাঁশ নিয়ে যে কোন এক প্রান্ত আড়াআড়িভাবে কাটতে হবে, যেন বাঁশের প্রান্তটি দুইদিক ফলকের মত দেখায়। অথবা ইংরেজি ট আকৃতির রিবনারকে শক্তভাবে বাঁশের দুই প্রান্তের সাথে বেঁধে নিতে হবে। রিবনার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
২. বাঁশের খণ্ডটির গোড়ার কিছু অংশ মাটির মধ্যে শক্ত করে পুঁতে দিতে হবে। পাশাপাশি ৩-৪ ফুট দূরে দূরে প্রয়োজন মত এমন বেশ কয়েকটি বাঁশের হুক তৈরি করা বা রিবনার বেধে যেতে পারে।
৩. এবার ঐ বাঁশের হুকগুলোর বা রিবনারের সঙ্গে একটি মুরুলী বাঁশ দিয়ে আড়া বাঁধতে হবে। যার উপর পাট গাছ জমি থেকে কেটে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে।
৪. পাট গাছগুলো বাঁশের আড়ার উপর দাঁড় করানোর পূর্বে গাছের গোড়ার ৩-৪ ইঞ্চি একটি শক্ত কাঠের হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে দিতে হবে।
৫. প্রতিটি গাছের গোড়ার থেঁতলানো ছালগুলো হাত দিয়ে দু’ভাগ করে গাছের গোঁড়া হুকের মধ্যে রাখতে হয়। মেঘলা বৃষ্টির দিন ছাল ছাড়ানো ভালো।
৬. গোড়ার ছালের দুই ভাগ দুই হাতে ধরে জোরে টান দিতে হয়। দেখা যাবে পাটের ছালগুলো সহজেই খড়ি থেকে আলাদা হয়ে গেছে। পাটখড়ি সামনের দিকে এভাবে চলে গেছে। ৩-৪টি পাট গাছের ছাল এক সঙ্গে বের করা সম্ভব।
একইভাবে সিঙ্গেল রোলার ও ডাবল রোলার রিবনারের সাহায্যেও পাটের রিবনিং করা যেতে পারে। এতে পরিশ্রম অনেক কম লাগবে এবং তাড়াতাড়ি রিবনিং করা যাবে। পরে ছালগুলো গোলকার করে মোড়া বাঁধতে হবে।
ছাল পচানোর পদ্ধতি :
১. বড় মাটির চাড়িতে ছালগুলোকে গোলাকার মোড়া বেঁধে সাজিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে চাড়িটি ভরে দিতে হয়। একটি বড় চাড়িতে প্রায় ২৮ কেজি ছাল পচানো সম্ভব।
২. পাট ক্ষেতের পাশে ১৮ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট প্রস্থ ৩ ফুট গভীর গর্ত করে গর্তটি পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তবে পলিথিন কাগজের পরিমাপ অনুসারে গর্ত ছোট বা বড় করা যেতে পারে। পরে যে কোন স্থান থেকে পরিষ্কার পানি দিয়ে গর্তটি ভরে ছালগুলো সহজেই সেখানে পচানো যায়। এরকম একটি গর্তে এক বিঘা জমির ছাল পচানো যায়। প্রতি এক কেজি কাঁচা ছাল পচানোর জন্য আড়াই থেকে তিন লিটার পানির প্রয়োজন। চিত্র : পাটের আঁশ পচানো
৩. বাড়ির আশেপাশে অথবা ক্ষেতের পাশে ১৫-১৬ ফুট লম্বা, ৬-৮ ফুট প্রস্থ এবং ২ ফুট গভীর গর্ত করে গর্তের তলা ও কিনারা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তবে পলিথিনের পরিমাপ অনুসারে গর্ত ছোট বা বড় করা যেতে পারে। পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে গর্তটি ভরে ছালগুলো পচানো যায়। সম্ভব হলে কচুরিপানা দিয়ে ছালের গোঁড়াগুলো ঢেকে দেয়া যেতে পারে। এ গর্তে কিছু পচন ইনোকুলাম (ব্যাকটেরিয়া) অর্থাৎ পাট পচানোর পানি দিলে পচন দ্রুত এবং নিশ্চিত হয়।
কম সময়ে ছাল পচানোর পদ্ধতি : পচন সময় দুইভাবে কমানো যায়। যেমন
১. ১০০০ কেজি কাঁচা ছালের জন্য ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে খুব কম সময়ের মধ্যে পচন সম্পন্ন হয়।
২. একটা ছোট হাঁড়িতে দুই একটা পাট গাছ ছোট ছোট টুকরা করে পচিয়ে নিতে হবে এবং ওই হাঁড়ির পানি পরবর্তীতে ছাল পচাবার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। এতেও পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
কৃপ্র/এম ইসলাম