কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ: গোল আলু কনটেন্টটিতে গোল আলু কীভাবে চাষ করা যায়, চাষ করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিনা, এক বিঘা জমির উৎপাদন খরচ, এর পুষ্টিমান এবং সর্বোপরি এর মাধ্যমে কীভাবে বাড়তি আয় করা সম্ভব, সে বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে মোট ৫ টি পর্বে আজ ১ম পর্ব।
বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কম বেশি আলুর চাষ করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই আলু প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশেও ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু খেতে বলা হচ্ছে। এর ইংরেজি নাম Potato ও বৈজ্ঞানিক নাম Solanum tuberosum. খাদ্য পুষ্টির অভাব মেটাতে আলু ভাতের বিকল্প হতে পারে। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গোল আলু চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
পুষ্টিমান : পুষ্টির দিক থেকে আলুকে ভাত ও গমের সাথে তুলনা করা হয়। আলুতে প্রচুর শর্করা আছে।
বাজার সম্ভবনা: বাংলাদেশে বছরে জনপ্রতি প্রায় ১৩.৩০ কেজি আলু সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ দেশে আলু প্রধানত: সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবজি ছাড়াও আলু দিয়ে ভর্তা, চিপস্ ও নানান সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা হয়ে। তাই শহর বা গ্রাম সবখানেই সারাবছরই আলুর চাহিদা থাকে। আলু চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। আলু বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
গোল আলু উৎপাদন কৌশল
জাত
১. ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল আলু জাতের অনুমোদন শুরু হয়।
২. প্রধানত: বিদেশী জার্মপ্লাজম জাত থেকে নির্বাচন করে আলুর জাত উদ্ভাবন করা হয়।
৩. এ সব জাত হচ্ছে হীরা, আইলসা, পেট্রানিস, মুল্টা, ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, মন্ডিয়াল, কুফরী সিন্দুরী, চমক, ধীরা, গ্রানোলা, ক্লিওপ্যাট্রা ও বিনেলা।
৪. বারি টিপিএস-১ এবং বারি টিপিএস-২ নামে ২টি হাইব্রীড আলুর জাত প্রকৃত আলু বীজ থেকে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
৫. আলুর অনুমোদিত জাতের মধ্যে কার্ডিনাল ও ডায়ামন্টের চাষ বেশি হয়।
তথ্যসূত্র : কৃষি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জুন ২০০৭, Microfinance for Marginal and Small Farmers (MFMSF) Project, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সেল-১, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ঢাকা।
* চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
জলবায়ু
|
মাটির প্রকৃতি
|
আলু শীতকালীন ফসল। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আলুর বীজ লাগানোর উপযু্ক্ত সময়। তবে আগাম ফসল পাওয়ার জন্য ভাদ্র মাসে আলুর বীজ লাগানো হয়।
|
আলু চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
|
জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি
১. আলুর চাষের জন্য নরম ও ঝুরঝুরা মাটি প্রয়োজন। আলুর জমিতে ঢেলা থাকা উচিত নয়।
২. মই ও মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙ্গে ফেলতে হবে ও জমি ৪-৫ বার গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
৩. আলুর বীজ সারিতে লাগাতে হবে। জমির উর্বরতা, সেচের সুবিধা ও জাতের উপর সারি থেকে সারির দূরত্ব নির্ভর করে।
৪. সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি (৬০ সে.মি.) এবং সারিতে ১০ ইঞ্চি (২৫ সে.মি.) দূরে দূরে বীজ বপন করতে হবে।
৫. ভালোভাবে জমি তৈরি করার পর সারির প্রয়োজনীয় দূরত্বে লাঙ্গল টেনে ক্ষেতের একমাথা থেকে অন্যমাথা পর্যন্ত নালা কাটতে হবে। প্রত্যেকটি নালা ৪-৫ ইঞ্চি (১০-১২ সে.মি.) গভীর করতে হবে।
৬. ৪-৫ সে.মি. মাটির গভীরে বীজ বপন করতে হবে।
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে, গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে গোল আলু চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
সেচ
বীজ আলু বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে (স্টোলন বের হওয়ার সময়) প্রথম সেচ দিতে হবে, দ্বিতীয় সেচ বীজ আলু বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে (শুটি বের হওয়া পর্যন্ত) এবং তৃতীয় সেচ আলুর বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে (শুটির বৃদ্ধি পর্যন্ত) দিতে হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি ফলন পেতে হলে ৮-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম