কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সাদা জবা; সাদার মাঝখানে অপূর্ব লাল চক্র, দেখলেই মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শ্বেত জবা বরাবরই আমাদের অগোচরে থেকে যায়। কালচে সবুজ গাছে সাদা জবার শুভ্র হাসি দেখে আকৃষ্ট হয় না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। জবা অতি পরিচিত একটা ফুল। সৌন্দর্য্য ও গুনাগুণের বিচারে “জবা”র জবাব মেলা ভার। নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর সাদা জবা সব মানুষের হৃদয়েই সুখকর আঁচর কাটে। প্রকৃতিপ্রেমিরা বাড়ির ছাদের টবে এ ফুল গাছ লাগিয়ে থাকেন। মাঝারি আকারের এ ফুল কোমল হৃদয়কে আরো সতেজ করে তোলে। কাটিং কিংবা গুটি কলম করে এ গাছের বিস্তার ঘটানো সম্ভব। ৩০-৪০ মিটার মাটি ভর্তি টব হলেই চলে। এমনই তথ্য জানালেন এগ্রিকালচার এক্সটেনশন ডিপার্টমেন্টের সাব এসিস্ট্রেন্ট অফিসার শংকর সাহা।
বসত বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ভিটে, আবাদী, অনাবাদী জমি কিংবা ঝোঁপ-জঙ্গলে হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির জবা। ফুলের রঙ সাদা, হলুদ, কমলা, লাল ইত্যাদি হতে পারে। তবে দিন দিন কমে আসছে জবা ফুলের সংখ্যা বিশেষ করে সাদা জবা এখন চোখে পড়ে খুবই কম। জবা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus rosa-sinensis । এটি সাধারণত: ৬ থেকে ১৬ ফুট উচ্চতার হয়ে থাকে। ফুলগুলোর ব্যাস ১০ সে.মি। জবা ফুল ঠোঙ্গা আকৃতির, পঞ্চমুখী, থোকা আকারের, নানান বর্ণের ঝোপ জাতীয় গাছ। সম্পূর্ণ ফুল বা শুধু পাপড়ি ও গাছের ছাল নানান কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বেশ প্রাচীনকাল থেকেই।
মালয় উপদ্বীপে এ ফুলকে বলা হয় বুঙ্গা রায়য়া (Bunga Raya)। ১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ায় জবা ফুলকে জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। শ্বেত জবা ফুলের লম্বা বৃত্ত থাকে। বৃত্তের শেষ মাথায় ফুলের পাঁচটি উপবৃতি আছে। উপবৃতির উপরে আছে পাঁচটি হালকা হলুদ রঙের বৃতি। এই বৃতিগুলো নলাকারে থাকে। এরপরে রয়েছে মূল ফুল। ফুলের পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। পাপড়িগুলো উপরের দিক একে অপরের সঙ্গে স্পর্শাকারে জড়িত এবং তলদেশের সাথে সংযুক্ত। জবা খুবই সহজলভ্য। গ্রামের অনেক বাড়িতে অনায়াশেই এর চারা পাওয়া যায়। বর্ষাকালের কিছুদিন পরপরই ডাল কেটে লাগালেই হয়ে গেল জবা গাছ। তবে আধুনিক কৃষি গবেষকদের উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের জবা এতটা সহজলভ্য নয়। প্রায় সারা বছরই ফুল পাওয়া যায়। তবে সর্বজন স্বীকৃত মত, বসত বাড়ির শোভা বর্ধনে জবা গাছের তুলনা নেই।
জবা ফুলের ঔষধিগুণ একাধিক। এই ফুলের কুঁড়ির রস জ্বরনাশক। জবা ফুলের রস থেকে তৈরি করা জবাকুসুম তেল, যা অত্যন্ত উপকারী। এ তেল ব্যবহারে চুলপড়া বন্ধ হয় ও চুল ঘনকালো হয়। কবিরাজি, পূজা অর্চনা ও গ্রাম বাংলায় টোটকা ঔষধি হিসেবে জবা ফুলের ব্যবহার বহুবিধ। মূত্রাতিসার, অনিয়মিত মেয়েলি সমস্যা, চোখ উঠা, মাথায় টাক পোকা, হাত পা ও শরীরের চামড়া উঠা ইত্যাদি রোগ উপশমে এর কার্যকারিতার প্রমাণ রয়েছে। ঘিওর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশরাফ উজ জামান জানান, জবা সৌন্দর্য্যের প্রতীক। নানা গুণে গুণান্বিত সাদা জবা ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়।
সুত্রঃ dailynayadiganta.com / কৃপ্র/এম ইসলাম