কৃষি প্রতিক্ষন বরিশাল : বরিশাল অঞ্চলের অধিকাংশ বরফ কলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ। অ্যামোনিয়া গ্যাস সংকটের কারনে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । ফলে ইলিশের ভরা মৌসুমে মাছ পচে যাওয়ার শঙ্কায় জেলেরা। তাদের অভিযোগ একটি মহল কৌশলে এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে । এদিকে মিল মালিকরা বলছেন,সার কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মধ্য জুলাই থেকে ডিলাররা সিলিন্ডারজাত অ্যামোনিয়া গ্যাস সরবরাহ করতে পারছেন না। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর জুড়ে ইলিশের প্রধান মৌসুম। আর বরফ কল চালু করতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাসের মতো। এতে করে ইলিশের ভরা মৌসুমে মিল থেকে চাহিদা মতো বরফ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
জেলা মৎস্য আড়ৎদার এসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাসের আশঙ্কা, সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকার ইলিশ বেচা-কেনায় এবার বিরূপ প্রভাব পড়বে।
আঞ্চলিক মৎস্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য জানা যায়, বিভাগের ৬ জেলায় বরফ কলের সংখ্যা ১’শ ১৮টি। এর মধ্যে সমুদ্র তীরবর্তী মহিপুরে ২৪টি বরফ কল রয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র ৬টি । এজন্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার সিলিন্ডার দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে তাদের । উপকূল আইস ফ্যাক্টরির মালিক অঞ্জন দাস জানান, বরফ উৎপাদনে অ্যামোনিয়া গ্যাস লাগবেই। এই গ্যাস পানি ঠাণ্ডা রাখতে ভূমিকা রাখে। বরফ কলের পরিমাপ অনুযায়ী অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রয়োজন হয়। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অ্যামোনিয়া গ্যাস পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি । জেলা বরফ কল মালিক সমিতির নির্বাহী কর্মকর্তা এমজি কবির জানান,বরিশাল নগরীতে ৮টি বরফ কলের মধ্যে কেবল ২টি সচল রয়েছে । মৌসুমে বরফ কল চালু করার জন্য কুলিং কয়েল, কম্প্রেসার, লিকেজ ক্যান ঠিক করা নিয়ে এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যায়। ভাদ্র-আশ্বিন ইলিশের ভরা মৌসুমে থাকবে। এখন বরফ কল চালু করতে না পারলে মৌসুমে চাহিদার বরফ তারা কিছুতেই সরবরাহ করতে পারবেন না। অ্যামোনিয়া গ্যাস সংকটের নেপথ্যে বাড়তি দাম হাতিয়ে নেওয়ার একটি চক্র কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন এই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) বরিশাল অফিসের ইনচার্জ আব্দুর রহিম খন্দকার বরফ কল মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ।
এদিকে, মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয় থেকে দেওয়া তথ্য মতে, বিভাগের ৬ জেলায় ২০১৫-১৬ উৎপাদন বর্ষে ইলিশ মিলেছে ২ লাখ ২১ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন। অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, মৎস অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও ইজারাদারদের কাছ থেকে ইলিশ আহরণের সংখ্যা পেয়ে থাকেন। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়াতে বিভিন্ন স্থানে ইলিশ অবতরণ হয় বলে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। এছাড়াও নদী পথে মাছ কেনা-বেচা হওয়ায় বছরে তাদের দেওয়া হিসেবের দ্বিগুণ ইলিশ আহরিত হয়। এই হিসেবে বরিশাল বিভাগে আহরিত ইলিশের সংখ্যা ৪ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। গড়ে প্রতি মণ ইলিশের বাজার দর ২৫ হাজার টাকা ধরলে, বছরে ২৭ হাজার ৬’শ ৯৯ কোটি টাকা মূল্য দাড়ায়।
বরফ সংকটে কারণে আর্থিকভাবে জেলে এবং মাছ ব্যসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন একথা স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। তবে বরফ সংকটের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
জেলা মৎস্য আড়ৎদার এসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস জানান, অ্যামোনিয়া গ্যাস সংকটের কারণে বরফ কলগুলো মধ্য শ্রাবণেও উৎপাদনের জন্য তৈরী না হওয়াতে ইলিশের ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। ইলিশের দেখা মিললে ভাদ্র থেকে কার্তিক পর্যন্ত স্থায়ীত্ব হতে পারে মৌসুম। সে হিসেবে বরফ কলগুলো ভাদ্রের শুরুতেই উৎপাদন উপযোগী করতে হবে। না হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জেলেরাও এবছর আর্থিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কৃপ্র/কে আহমেদ/ এম ইসলাম