কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার বাঁশখালী গ্রামের তরুণ কামরুল হোসেন চিন্তা করলেন পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করবেন। প্রথমে নিজেদের কিছু জমি বন্ধক দিয়ে বাড়ির কাছে একটি পুকুরে মাছচাষ শুরু করেন। জমি বন্ধকের ৪০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। বর্তমানে চট্টগ্রামের ‘ফিস জোন’ হিসেবে খ্যাত মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রকল্প এলাকায় কয়েকশ’ মাছচাষির মডেল ‘ফারহা মৎস্য প্রকল্প’র মালিক কামরুল হোসেন। ৪০ একর জায়গাজুড়ে তার প্রকল্পে ১৫ জন কর্মচারী নিয়মিত কাজ করেন। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য তিনি উপজেলার মাছচাষিদের কাছে মডেল।
মুহুরী প্রকল্প এলাকায় বিস্তৃর্ণ জমিতে মাছ চাষ করে কামরুলের মত স্বাবলম্বী হয়েছেন হাজারো তরুণ-যুবক। একটি-দুইটি করে শুরু করে বর্তমানে এখানে কয়েকশ’ মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেউ কেউ এককভাবে উদ্যোগ নিলেও বেশির ভাগ ৫-৭ জন আবার ১০-১২ জন সিন্ডিকেট করেও মৎস্য চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্যোগী হয়েছেন। উদ্যোক্তা ছাড়াও এসব মৎস্য খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের। সুস্বাদু হওয়ায় মুহুরী প্রকল্পের মাছের বেশ চাহিদাও রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন ভোরে এখান থেকে মাছ চলে যায় চট্টগ্রাম ও ফেনী সহ বিভিন্ন স্থানে। চট্টগ্রাম শহর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে প্রকল্পের পাড় থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে চট্টগ্রাম জেলার মিঠা পানির মাছের ৭০ ভাগের যোগান আসে এই মুহুরী প্রকল্প এলাকার মৎস্য খামারগুলো থেকে। রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফলতা অর্জন করায় এখানকার খামার রূপালী মৎস্য চাষ প্রকল্প ২০১২ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের স্বর্ণপদক লাভ করে। মাছচাষে কোন সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে কামরুল হোসেন বলেন, ‘বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় প্রকল্প থেকে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। আর যাতায়াতের সড়কটি চলাচলের অনুপোযোগী। জোরারগঞ্জ থেকে মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা। এতে মাছের গাড়ি নিয়ে বাইরে যেতে অনেক সমস্যা হয়। সড়কটি জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’ তিনি ওই এলাকার আজমপুর বাজারে একটি ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
জসীম উদ্দীন নামের অপর এক সফল মৎস্যচাষি জানালেন, ‘প্রতি তিন মাস পরপর প্রকল্প থেকে মাছ বিক্রি করি। বছরে প্রায় আট লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। যার মধ্যে খরচ পড়ে পাঁচ লাখ টাকা, আর লাভ করি তিন লাখ।’ তিনি মুহুরী প্রকল্প এলাকায় রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। ইছাখালী, বাঁশখালী ও কোম্পানীনগর (ইবাক) সমবায় সমিতির সভাপতি এম এইচ লাভলু চৌধুরী বলেন, ‘মাছ চাষ করে অনেকেই এখন জিরো থেকে হিরো। বিশেষ করে যারা আধুনিক প্রযুক্তিতে ও নিময়নীতি জেনে মাছের পরিচর্যা করতে সক্ষম তারাই বেশি লাভবান হচ্ছেন।’
মীরসরাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান ‘মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রচুর মৎস্য খামার। এখানকার চাষিদেরকে মাছ চাষের বিষয়ে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি। খামারগুলো দেশে প্রাণীজ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বড় অবদান রাখছে। হাজার খানেক উদ্যোক্তা এখানে মাছের খামার করে মৎস্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কর্মসংস্থানও হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের।’ উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ফেনী নদীর শেষ প্রান্তে বাঁধ দিয়ে মুহুরী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বাঁধ দেয়ার পর বিস্তৃর্ণ খাস জমিতে মাছের চাষ শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। একসময় যেখানে লবনাক্ততার কারণে বছরে একবার চাষ করাও কষ্টসাধ্য ছিলো- সেই জমিতে মাছের চাষ করে বড়সড় সাফল্য ধরা দেয়, বলা যায় রুক্ষ জমিতে সোনা ফলিয়েছে যুবসমাজ। ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য খামার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে মুহুরী মৎস্য প্রকল্প।
সুত্রঃ বাসস/ রিপোর্ট , দেবদুলাল ভৌমিক