খালিদ আহমেদ : পাটকাঠি থেকে কয়লা বা অ্যাকটিভেটেড চারকোল বা জুটষ্টিক চারকোল উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে । এ পণ্যটির উৎপাদন বাড়াতে পারলে সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন । দেশে প্রথম ২০১২ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছরই সর্বপ্রথম চীনে এ পণ্য রফতানি করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারকলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশে এ পণ্য উৎপাদনের ব্যাপ্তি বাড়লে আগামীতে জাপান, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, কানাডা ও মেক্সিকোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারকল রফতানি সম্ভব হবে ।
বর্তমানে বিদেশে চারকল দিয়ে তৈরি হচ্ছে- ফেসওয়াস, ফটোকপিয়ারের কালি, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কার করার ওষুধ ও আতশবাজি। এছাড়া বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে এ কার্বন ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০-১২টি চারকল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সানবিম করপোরেশন, মাহফুজা অ্যান্ড আহান এন্টারপ্রাইজ, জামালপুর চারকল লিমিটেড ,রিগারো প্রাইভেট লিমিটেড ও দিনাজপুরের চারকোল এন্ড চারকোল লিমিটেড। বর্তমানে দিনাজপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চারকোল উৎপাদন শুরু হয়েছে ।
দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে যদি ৫০ ভাগ পাটকাঠি চারকল উৎপাদনে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন চারকল উৎপাদন সম্ভব হবে। যা বিদেশে রফতানি করে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সারাদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। চারকল শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চারকল শিল্পকে একটি উদীয়মান শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও পাটজাত পণ্য হিসেবে ২০ ভাগ ক্যাশ ইনসেনটিভ পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ শিল্প বিকাশে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অর্ন্তভুক্ত বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুযোগ দিতে হবে। এ শিল্পের জন্য দ্রুত পৃথক নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এছাড়া এ শিল্পের জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সাথে চারকল শিল্প মালিকদের এক বৈঠক গত ৩১ জুলাই মন্ত্রনালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় । শিল্প মালিকদের এই সব দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন এ খাততে যে সব সমস্যা রয়েছে তা সরকার অবগত আছে । এ সমস্যা দূর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । এ বিষয়ে শিগরিই আর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আয়োজন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চারকল শিল্পের বিকাশের জন্য সব পক্ষের সার্বিক সহযোগিতা চান বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম