কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : দেশে গমে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছে বলে চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় । বিজ্ঞানীদে বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ব্লাস্ট স্থায়ীভাবে প্রতিরোধের উপায় বের না করতে পারলে তা হয়ে উঠতে পারে বড় এক দুশ্চিন্তার কারণ। খাদ্য চাহিদা পূরণে ধানের পরে গমের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। আবাদ যত জোরে সম্প্রসারিত হচ্ছে তার চেয়ে জোরে বাড়ছে আমদানির পরিমাণ। এমন পরিস্থিতিতে গেল ফেব্রুয়ারিতে দেশের ৮ জেলার ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মতো ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ হয়।
ছত্রাক সনাক্তের পর পুড়িয়ে দেয়া হয় একরের পর একর গমক্ষেত। কোথা থেকে কীভাবে এই ছত্রাক সম্প্রসারিত হয়েছে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। হুইট ব্লাস্ট প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংগঠক ড. আবেদ চৌধুরী মনে করছেন, ঘাস বা অন্য কোথাও হয়তো এই ছত্রাক বংশবৃদ্ধি করতে পারে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও এর আক্রমণ বাড়তে পারে বলে বারির গম গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. নরেশ চন্দ্র বর্মণের ধারণা। তবে ব্লাস্ট গবেষণায় সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীকে তড়িৎ গতিতে এক প্লাটফর্মে দাঁড় করাতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. তোফাজ্জল। তিনি বলেন, আমদানিকৃত গম থেকে এমনটা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারটা নিশ্চিত না হলেও ছত্রাকটা যে বীজের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে এটা নিশ্চিত।
ড. তোফাজ্জল বলেন, ‘বিজ্ঞানীরা গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে তথ্য জানাতে চান না। কিন্তু আমরা তথ্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যেন গ্লোবাল সায়েন্টিফিক কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে আমরা জীবাণুটাকে মোকাবেলা করতে পারি।’
গত মাসে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সিমিট বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ব্লাস্ট প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক কর্মশালা। সেখানকার অভিজ্ঞতায় গমের ব্লাস্টের ধানে সংক্রমণ নিয়ে নতুন হিসেব নিকেশ করতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের। ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ‘একজন জার্মান অধ্যাপকের একটি গবেষণাপত্র থেকে আমরা জানতে পারি, ধানের ব্লাস্ট গমের কিছু করতে পারে না। কিন্তু গমের ব্লাস্ট ছত্রাক ঠিকই ধানে ঢুকতে পারছে। তবে ধানে ঢুকে এটি কোনো ক্ষতি করতে পারছে কিনা তা এখনো অজানা। এটা পরীক্ষা করা জরুরি।’ সিমিট বলছে, আগামী মৌসুমের বীজের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সিমিটের সিনিয়র টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. দীনবন্ধু পণ্ডিত বলেন, ‘সিড ট্রিটমেন্ট করতে চাইলে প্রো এক্স-এর পরামর্শ দেই। এটা একটু ব্যয়বহুল। এক কেজি বীজের ট্রিটমেন্ট করতে ৮-৯ টাকা খরচ পড়ে।’ তবে বিএডিসি’র দেয়া সব বীজ আগে থেকে পরিশোধন করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এর ভয়াবহতার প্রশ্নে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। পুরো এশিয়াতে এটি ছড়িয়ে পড়ার বড় একটি আশঙ্কা রয়েছে। কেননা শুধু বীজ নয়, বাতাসে স্পোরের মাধ্যমেও ছত্রাকটি ছড়াতে পারে। এছাড়াও বর্তমান জলবায়ু ব্লাস্টের ছড়ানোর জন্য পুরোপুরি অনুকূল। এটি যদি সম্প্রসারিত হতে পারে তবে তা বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় সংশয় বাংলাদেশের, তাই যে কোনো মূল্যে আমাদেরকেই ব্লাস্ট প্রতিরোধে সাফল্য অর্জন করতে হবে, এমন তাগিদ বিজ্ঞানীদের।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম