কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে ঢাকার দোহার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের কয়েক শ পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। এদিকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পাঁচ দিনে বহু মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের বেশির ভাগই নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা।ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরই পদ্মার ভাঙনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। এ বছর ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। তাদের অভিযোগ, তিন-চার মাস আগে পদ্মাতীরবর্তী গ্রামগুলোর কাছে যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। এর ফলে নদীর পানিপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ব্যাপক ভাঙন ধরে। ভাঙনের শিকার হয়ে ইতিমধ্যে হাজারো মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
নদীভাঙনে উপজেলার সুতারপাড়ার ইউনিয়নের মধুরচর ও রানীপুর গ্রামের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুই গ্রামের শত শত পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। সুতারপাড়া ইউনিয়নের মেঘুলা বাজার এলাকা থেকে প্রায় ৩০০-৪০০ গজ দূরে মুধরচর গ্রাম। গতকাল মঙ্গলবার ওই গ্রামে ঢুকতে গিয়ে দেখা যায়, নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো তাদের আসবাবপত্র নিয়ে ভ্যানগাড়ি ও ট্রাকযোগে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। গ্রামের বহু বাড়ি প্লাবিত। মধুরচর গ্রামের কালাম শেখ বলেন, ‘শুনেছি পদ্মার ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের ঘরবাড়ি কখন যে পদ্মায় চলে যাবে, জানি না।’
মধুরচর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আলিম উল্লাহ জানান, তাঁদের বাড়ির কাছে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু তুলছে দুর্বত্তরা। এতে নদীর পানিপ্রবাহের পথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় গ্রামে ভাঙন ধরেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাহায্য চাই না, ভাঙনরোধ চাই।’ ফুলছড়ি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, তাঁদের গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ার পর এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বছর শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ভেসে গেছে। তিনি ভাঙনরোধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা জানান, তাঁর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের মানুষ নদীভাঙনে শিকার। এর মধ্যে কৃষ্ণদেবপুর, আলীনগর, ফুলছড়ি ও কুতুবপুর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে ৪ টন চাল ও ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করেছেন। যোগাযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম আল আমিন বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ইতিমধ্যে বন্যা ও নদীভাঙন-কবলিত ছয়টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৫১৩টি পরিবারের জন্য ২৫ মেট্রিক টন ও দেড় লাখ টাকা বণ্টন করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার আরও ১০ মেট্রিক টন চাল ও দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইউএনও বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় দায়িত্ব নেওয়ার পর মৈনট ও মাহমুদপুর ঘাট এলাকায় তিনটি যন্ত্র আটক করে বালু তোলা বন্ধ করেছি।’
নদীভাঙনের পাশাপাশি দোহার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, বিলাসপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর, ফুলছড়ি, আলীনগর, কৃষ্ণদেবপুর, দেবীনগরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না। সুতারপাড়া ইউনিয়নের মধুরচর গ্রামের নুরুল ইসলাম (৬০) বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানিতে তাঁদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। এখন আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাঁদের দেখার কেউ নেই।
সুত্রঃ prothom-alo.com