কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে গত কয়েক বছরে হারিয়ে গেছে অনেক প্রজাতির মাছ। ৭-৮ বছর আগেও হালদাতে ৮০টির মত প্রজাতির মাছ ছিলো। কিন্তু এ কয়েক বছরেই অনেক প্রজাতির মাছের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে, শীতল, ফলি, চিতল, রিতা, মধু পাবদা, ভেটকি, কোকসা, গজার, গারুয়া ও বাতাসী প্রজাতির মাছগুলো এখন আর হালদায় চোখে পড়ে না। এক সময় প্রচুর চিংড়ি, বাইন, বাইলা, বোয়াল মাছ পাওয়া গেলেও এখন এদের সংখ্যাও অনেক কমেছে।
অন্যদিকে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হালদা নদী থেকে মা-মাছের ডিম থেকে পোনা উৎপাদনের পরিমাণও আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর হালদা থেকে সংগ্রহ করা ডিম থেকে মোট ১১১ কেজি পোনা উৎপাদন হয়েছে, যা গত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে সর্বনিম্ন। এর আগে গত বছর ৬ হাজার ৩৬০ কেজি ডিম থেকে ১১৮ কেজি পোনা, ২০১৪ সালে ৩০ হাজার ৪৮০ কেজি ডিম থেকে ৫০৮ কেজি পোনা, ২০১৩ সালে ১৩ হাজার ৫শ’ কেজি ডিম থেকে ৬২৬ কেজি পোনা, ২০১২ সালে ৩১ হাজার কেজি ডিম থেকে ১৫ হাজার ৬৯ কেজি পোনা, ২০১১ সালে ১৩ হাজার ৪শ’ কেজি ডিম থেকে ৩২৬ কেজি পোনা উৎপন্ন হয়।
মৎস্য বিভাগ ও বিশেষজ্ঞদের দাবি, হালদা থেকে অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য আহরণ এবং মা মাছ নিধনের কারণে কমছে নানা জাতের মাছের সংখ্যা। একইসাথে কল-কারখানার বজ্য থেকে নদী দূষণ, বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণসহ মানবসৃষ্ট কারণেও দিনে দিনে নিজস্ব অনন্য প্রাকৃতিক চরিত্রটি হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশের ন্যাশনাল হেরিটেজ হালদা। নদীর পাড়ের মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিষিদ্ধ সময়ে হালদা পাড়ের জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও বাইরের কতিপয় লোক রাতের আঁধারে মা-মাছ চুরি করে। এরফলে দিন দিন মাছের ডিমও কমে যাচ্ছে।
অন্য এক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, হালদায় কাতাল মাছের বিচরণ অপরিবর্তিত থাকলেও কমে যাচ্ছে রুই, মৃগেলসহ অনেক সম্ভ্রান্ত মাছ। গত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে হালদা থেকে আহরণ করা ডিমের সিংহভাগই কাতলা মাছের। এ বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের মধ্যে ৮০ ভাগই ছিলো কাতলা মাছের। আর রুই ৪ ভাগ, মৃগেল ১২ ভাগ ও কালিবাউস ৪ ভাগ।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বাসসকে বলেন, ‘হালদায় ২০০৯ সালে এক গবেষণায় ৭৯ প্রজাতির মাছ দেখা গিয়েছিলো। ২০০৯ সালে যেসব প্রজাতির মাছ দেখা গিয়েছিলো তার প্রায় অর্ধেক এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে হালদা থেকে যে ডিম সংগ্রহ হয়েছে তাতে দেখা গেছে মাত্র ৪ ভাগ রুই এবং এক ভাগ কালিবাউস প্রজাতির। এতে স্পষ্ট হচ্ছে, কালিবাউস ও রুই জাত দুটি বিলুপ্তির পথে। এই জাতগুলো রক্ষায় তেমন কোন পদক্ষেপ নেই। এভাবে চলতে থাকলে রুই ও কালিবাউস মাছ হালদায় আর পাওয়া যাবে না।’ চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতী দেব বলেন, ‘হালদায় এ বছর মা মাছ কিছুটা কম ডিম দিয়েছে। গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ও ১৯ মে হালদায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। তবে ১৯ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে ডিম সংগ্রহ করা যায়নি। হালদা নদীর পাড়ে সরকারি ৭টি হ্যাচারি আছে। এসব হ্যাচারিতে ডিম থেকে পোনা উৎপন্ন হয়।’
সুত্রঃ বাসস / রিপোর্টঃ ॥ দেবদুলাল ভৌমিক ॥