কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : চট্টগ্রামের পটিয়া, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশ উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জমিতে উৎপন্ন ‘কাগজী লেবু’ এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বেশ জনপ্রিয় এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এ লেবুর চাহিদা বিদেশেও দিন দিন বাড়ছে। তবে পুষ্ট, অপেক্ষাকৃত বড় ও দেখতে সুন্দর- এমন লেবুর রফতানি সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই রফতানিযোগ্য মানসম্পন্ন লেবু উৎপাদনের জন্য সরকারের কাছে ‘বিশেষায়িত অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। খবর বাসসের । চলতি মৌসুমে লেবুর বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বর্ষার শুরুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। রমজান, ঈদ ও আবহাওয়া গরমের কারণে লেবুর চাহিদা থাকায় চাষি ও খুচরা বিক্রেতারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
তিন উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার একর পাহাড়ি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ‘কাগজী লেবু’ নামের বিশেষ জাতের এ লেবুর চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পাতি, এলাচি, বাতাবি ও সিডলেন্স এই ৪ জাতের লেবুও চাষ হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে লেবুর ফুল আসে। আষাঢ়-শ্রাবণে লেবুর ভরা মৌসুম। চাষি ও পাইকারী ব্যবসায়ী ছাড়াও ৭-৮ হাজার খুচরা ব্যবসায়ী লেবু বিপণনের সাথে জড়িত। সবমিলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লেবু চাষে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আশির দশকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় কাগজী লেবু চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে পটিয়া উপজেলার খরনা, হাইদগাঁও, কেলিশহর, চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা, জৈষ্ঠ্যপুরা ও কানুনগোপাড়ার পাহাড়ি এলাকার লাভজনক লেবুচাষ সম্প্রসারণ হতে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে লেবু উৎপাদনে সাফল্যের কারণে উল্লিখিত গ্রামগুলোকে লেবু গ্রামও বলে থাকেন অনেকে। লেবু মৌসুমে পটিয়ার কমলমুন্সির হাট এবং বোয়ালখালী-চন্দনাইশে পাইকারি লেবু বিক্রির হাট বসে।
পটিয়ার খরনার লেবু চাষি আবদুল নুর জানান, ‘পাহাড়ি উর্বর ভূমিতে ভালো ফলন হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষের প্রতি অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন।’ তিনি পরিত্যক্ত পাহাড়ি ভূমি চাষিদের লিজ দিয়ে লেবু চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান। তাহলেই বিশেষায়িত জমি তৈরি করে পুষ্ট ও ভালো মানের রফতানিযোগ্য কাগজী লেবু উৎপাদন ও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ওই চাষি। এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, ‘শুধু পটিয়ার ১০ হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো এ এলাকার লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।’ তিনি বলেন ‘দেশের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবুর সবচেয়ে বেশি চাষ হয় পটিয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে লেবু বাগান রোগমুক্ত করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম