কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : বরিশালে সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও মজুদ করা যাচ্ছেনা গুদাম সংকটের করনে । সরকারের ৩টি গুদামের মধ্যে ১টি ভাড়া দেওয়ার কারনে এই পরিস্থির সৃষ্টি হয়েছে বলে অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় । বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের তিনটি গুদামের একটি ভাড়া নিয়ে দুই দশক ধরে নিজেদের দখলে রেখেছেন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান খান সন্স। চলমান আমনের পিক মৌসুমে তিন হাজার মে.টন ধারণ ক্ষমতার গুদামে দ্বিগুণেরও বেশি সার রাখায় এর গুণগত মান ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
দখলে থাকা গুদামের বিষয়ে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। চাষাবাদের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরেটেড অব পটাস (এমওপি) এবং ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) নামক তিনটি সার সরবরাহ করে থাকে। আর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) থেকে কেবল ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়। এই সার রাখার জন্য বরিশাল নগরীর বান্দরোডে কীর্তনখোলা তীরবর্তী বিএডিসি’র ৩টি গুদাম রয়েছে। যার প্রতিটি তিন হাজার মে.টন করে ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
বিএডিসি সহকারী পরিচালকের (সার) দফতর থেকে পাওয়া তথ্য হলো, ৩টি গুদামের মধ্যে একটি তারা নিজেরা সার রাখেন, আরেকটিতে বিসিআইসি’র ইউরিয়া সার রাখার জন্য ব্যবহার করেন এবং অপরটি ১৯৯৫ সালে খান সন্স নামক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় নিয়েছেন। এ নিয়ে দফতরটির যুগ্ম পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, তাদের প্রয়োজনে খান সন্সকে নোটিস দিয়েছিলেন গুদাম ছেড়ে দেওয়ার জন্য। নোটিস পেয়ে তারা উচ্চ আদালতে আশ্রয় নিয়ে স্থিতাবস্থার আদেশ এনেছেন। ৩ হাজার মে. টন ধারণ ক্ষমতার গুদামটির বর্তমান ভাড়া ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা হলেও খান সন্স আগের মতোই ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে। তাদের গুদামে বর্তমানে টিএসপি ১৫৪ মে.টন, এমওপি ৪ মে.টন এবং ডিএপি ৭শ’ ৮ মে.টন সার রয়েছে। ১ হাজার মে.টন এমওপি এবং আরও ১ হাজার মে.টন টিএসপির চাহিদা ডিলারদের কাছ থেকে পেয়েছেন। তবে স্থানের অভাবে পিক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দর থেকে সার এনে সরাসরি ডিলারদের সরবরাহ করে থাকেন।
বিসিআইসির বরিশাল অফিসের উপ ব্যবস্থাপক মশিউল ইসলাম জানান, বরিশাল অঞ্চলে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাস ইউরিয়া সারের পিক সময়। এখানের কৃষকরা আমন ধানের চাষ বেশি করেন। তারা আপদকালীন সময়ে যাতে ইউরিয়া সরবরাহ করতে পারেন এজন্য ৩০ জুলাই পর্যন্ত তাদের ৬ হাজার ২’শ ৮০ মে. টন ইউরিয়া মওজুদ আছে। আরো সার আসার অপেক্ষায়। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এই গুদাম থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার তালিকাভুক্ত ২০৩ জন ডিলারকে সার সরবরাহ শুরু করবেন।
৩ হাজার মে.টন ধারণ ক্ষমতার গুদামে ৬ হাজার মে.টনের বেশি সার মওজুদ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, গাদাগাদি হয় সত্য, তবে প্যাকেট করা থাকায় বাতাসে সমস্যা করতে পারে না। কেবল পানি লাগলে ইউরিয়া সারের ক্ষতি হয়। গুদামজাত সার বছরের অধিক সময় পর পরীক্ষা করে দেখেছেন নাইট্রোজেনের পরিমাণ ৪৬ ভাগই রয়েছে। গুণগত মান পরিবর্তন হয়নি। এ নিয়ে কৃষি অধিদফতরের উপ পরিচালক তুষার কান্তি সমাদ্দার বলেন, প্লাটফর্ম না থাকলে সার মেঝেতে রাখলে মাসাধিক সময়ের মধ্যে নিচের বস্তার ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে করে গুণগত মানে সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়াও গ্যাস সৃষ্টি হলে সারের ক্ষতি হয়।
আঞ্চলিক কৃষি দফতর থেকে দেওয়া হিসেব হলো ২০১৬-১৭ বর্ষে বরিশাল জেলায় ১৬ হাজার ৭৭৪ মে. টন ইউরিয়া, ৮ হাজার ৭৯০ মে.টন টিএসপি, ৮ হাজার ১৫০ মে.টন ডিএপি এবং ৬ হাজার ৫০ মে.টন এমওপি সারের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। বিএডিসির এই গুদাম থেকে বরিশালের মতো আরও ৩টি জেলায় চাহিদার ৪ ধরনের সার সরবরাহ করতে হবে। এজন্য আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডিলারদের সার নিতে এসে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাড়ার জন্য গাড়ি ভাড়া বেশি গুনতে হয়। ডিলারদের এই অভিযোগের বিষয়ে বিএডিসি’র সহকারী পরিচালক (সার) সুব্রত দেউরী বলেন, তাদের সরবরাহ করা টিএসপি, এমওপি আর ডিএপি সার তিউনিশিয়া, মরক্কো, রাশিয়া, বেলারুশ, সৌদি আরব ও আবুধাবী থেকে আমদানি করা হয়। গুদামের সংকটের কারণে তারা সার এনে মজুদ রাখতে পারেন না। এজন্য ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী মংলা বা চিটাগং বন্দর থেকে সার এনে সরবরাহ করায় তেমন সমস্যা হয় না বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
আর দুই দশক ধরে সরকারী গুদাম ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান খান সন্স কিভাবে দখল করে আছে তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, চলতি আমন মৌসুমে সারের বেলায় কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে তারা সচেষ্ট আছেন। তবে সরকারী গুদাম ছেড়ে দেওয়ার নোটিস দিলেও নিজেদের দখলে রাখার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি খান সন্সের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম