কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধী রুকোলা উদ্ভিদ বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। এ উদ্ভিদ ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রুকোলা চাষে সফল হয়েছেন। ২০১৪ সালে সুদূর ইতালি থেকে বীজ সংগ্রহ করে তিনি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় রুকোলা উৎপাদনের জন্য গবেষণা শুরু করেন।
আবদুর রহিম বলেন, নিয়মিত সবুজ রুকোলা সেবনে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও রক্তনালিসংক্রান্ত রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব। মানুষের শরীরে রুকোলা এসব রোগ নিরাময়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, মিসর, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রে এ উদ্ভিদ চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এ পর্যন্ত কোথাও রুকোলা চাষের খবর পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইতালি থেকে বীজ সংগ্রহ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন আবদুর রহিম। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, এটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর জন্মানোর উপযোগী। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমের চেয়ে শীতে পাতার বৃদ্ধি ও উৎপাদন বেশি হয়। পাতার মতো সারা বছর বীজ উৎপাদন করা যায় না। শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে এ উদ্ভিদ থেকে ফুল ও বীজ পাওয়া যায়।
এই শিক্ষকের দাবি, বাংলাদেশে রুকোলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু সারা বছর এটির পাতা উৎপাদন সম্ভব, তাই গ্রামে বাড়ির আঙিনায়, শহরে টবে, বাসার ছাদে কিংবা ঝুল-বারান্দায়ও চাষ করে বছরজুড়ে সতেজ পাতা পাওয়া সম্ভব। তিনি জানান, রুকোলার সবুজ পাতা সরাসরি কাঁচা সালাদ হিসেবে টমেটো, জলপাই ও পনিরের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। আবার পিজা টপিং হিসেবে, পাস্তার সঙ্গে এবং মাছ ও মাংস দিয়ে তৈরি নানা খাবরের সঙ্গেও মিলিয়ে খাওয়া হয়। এ ছাড়া রুকোলার বীজ থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন সম্ভব। কখনো কখনো এটা পালং শাকের মতো রান্না করেও খাওয়া যায়।
এ উদ্ভিদের বংশপরিচয় সম্পর্কে আবদুর রহিম জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন ইতালিতে ‘রুকোলা’, যুক্তরাষ্ট্রে ‘আ রুগুলা’, জার্মানিতে ‘সালাট্রুকা’, স্পেনে ‘ইরুকা’ ও ফ্রান্সে ‘রকেট’। রুকোলার উৎপত্তিস্থান ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। ইতালিতে রুকোলা রোমান যুগ থেকে চাষ করা হচ্ছে। তাই ধারণা করা হয়, ইতালিই এর উৎপত্তিস্থান। এ অঞ্চল থেকে পরে বিভিন্ন দেশে এর চাষ বিস্তার লাভ করে।
কৃপ্র/এম ইসলাম