কৃষি প্রতিক্ষন রিপোর্ট : ইলিশের দেশে ইলিশ নেই। ভরা মৌসুমেও ইলিশ মিলছে না। সামান্য কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও তাতে মুনাফা তো দূরের কথা খরচের টাকাই আসছে না। ফলে জেলেদের মাথায় হাত। এতে একদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ইলিশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকারের নীতিতে বড় ধরনের ভুল রয়েছে।
নীতিতে পরিবর্তন না আনলে আগামীতে বড় বিপর্যয় মুখে পড়বে এই মৎস্য শিল্পটি । তবে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার থেকে ইলিশের আকাল শেষ হয়েছে । আগামীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে । জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ ভাগ আসে ইলিশ থেকে, যার আনুমানিক মূল্য ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। দেশের প্রায় ৫ লাখ জেলে ইলিশ আহরণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। আড়াই মাস আগে ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ তেমন ধরা পড়ছে না। এতে উপকূলের লাখো জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবে ইলিশের মৌসুম হচ্ছে সাড়ে ৪ মাস (জ্যৈষ্ঠের ১৫ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত)। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই মাস চলে গেছে। ভাদ্র ও আশ্বিনে সাগর উত্তাল থাকবে। তখন জেলেরা গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরতে পারবেন না। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ৮ দিনে ২১০ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে । অথচ ইলিশের এই ভরা মৌসুমে এ সময়ে ৮০০ মেট্রিক টনের মতো মাছ বিক্রি হওয়ার কথা। কেন্দ্রের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ কেনাবেচা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার মো. সোলায়মান শেখ বলেন, ইলিশ দিনে দিনে নদী থেকে সাগরে, সাগর থেকে গভীর সাগরে চলে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এমনাটা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি । পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদারা বলেন, ইলিশ ধরা না পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এবার দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা এ খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। এখন সবাই দুশ্চিন্তা করছেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন সুলতান মাহমুদ বলেন, সিডর ও আইলার পর উপকূলের সামগ্রিক জলবায়ুর গতি-প্রকৃতি ও সামুদ্রিক প্রতিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ঋতুর পরিবর্তন হয়েছে। ইলিশের প্রজননেও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তবে ভারী বর্ষণ শুরু হলে ইলিশের প্রাচুর্য বাড়তে পারে। এ বিষয়ে কথা হয় বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বজলুল রশিদের সাথে । তিনি কৃষি প্রতিক্ষনকে জানান, সোমবার থেকে ইলিশ ধরা পড়ছে । তিনি বাজারে প্রচুর ইলিশ মাছ দেখেছেন । আগামীতে আরো ইলিশ ধরা পড়বে বলে জানান তিনি ।
কৃপ্র/কে আহমেদ/ এম ইসলাম