কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বর্তমান ফ্যাশনের দুনিয়ার মানুষজন পরিবেশ-বান্ধব আখ্যা পেতে ব্যাকুল৷ কিন্তু সে দাবি আর বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে কিছু ফারাক থেকে যায়, কেননা ‘‘সবুজ” ফ্যাশনের দুনিয়াটা পরস্পরবিরোধিতায় ভরা৷ ফাস্ট ফ্যাশন জামাকাপড়ের দুনিয়াকেই বদলে দিয়েছে৷ জার্মানিতে এককালে ৩০ ইউরোর একটা টি-শার্টকে দাঁও বলে মনে করা হতো; আজকাল ১৫ ইউরোর টি-শার্টই বড় বেশি দাম বলে মনে করা হয়৷ তিন ইউরোর টি-শার্ট তিনটে টি-শার্টের প্যাক করে বিক্রি করা হয়৷
সস্তার ফাস্ট ফ্যাশনের আসল মূল্য দিতে হচ্ছে পরিবেশকে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা সেদিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার পর ইকো-ফ্যাশন, অর্থাৎ ইকোলজিক্যাল ফ্যাশন বা পরিবেশ-বান্ধব ফ্যাশন এখন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সব জামাকাপড়ের কোম্পানিরাই এখন এই তকমাটি চান৷ ফাস্ট ফ্যাশন কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম এইচঅ্যান্ডএম যেমন ওয়ার্ল্ড রিসাইকল উইক চালায় গত ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল, ২০১৬; লক্ষ্য ছিল, অন্তত এক হাজার টন পুরনো জামাকাপড় সংগ্রহ করা৷ একদিকে যেমন বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো সাস্টেইনেবল বা টেকসই উৎপাদনের উপর জোর দিচ্ছে, গ্রাহকরা অরগ্যানিক ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকছেন, অপরদিকে সেকেন্ড হ্যান্ড জামাকাপড়ের দোকানের সংখ্যা বাড়ছে – তেমনই এই বস্তুত ইতিবাচক প্রবণতা ও তার কার্যকরিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে৷
এইচঅ্যান্ডএম-এর ওয়ার্ল্ড রিসাইকল উইক-এর অর্থ, খরিদ্দাররা তাদের পুরনো জামাকাপড় রিসাইকল করলে পুরস্কার হিসেবে একটা ডিসকাউন্টের কুপন পাবেন৷ কিন্তু মজা হলো এই যে, সংগৃহীত পুরনো জামাকাপড়ের মাত্র এক শতাংশ বাস্তবিক রিসাইকলড ফাইবার হিসেবে ব্যবহার করা চলে৷ যে কারণে পরিবেশ সংরক্ষণবাদিদের যুক্তি হলো, এমনভাবে জামাকাপড় তৈরি করো যাতে তা বহুদিন ব্যবহার করা যায়; গ্রাহকরা পুরনো জামাকাপড় ফেরৎ দিয়ে নতুন জামাকাপড় কেনার কুপন পেলে, তা থেকে পরিবেশের বিশেষ কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি নেই৷ এক কথায়, টেকসই বা পরিবেশ-বান্ধব হওয়ার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ জামাকাপড় বিক্রিটা ঠিক মেলে না৷
অরগ্যানিক ফ্যাশন, নাকি সেকেন্ড হ্যান্ড?
অরগ্যানিক ফ্যাশনের অর্থ হলো, এই সব জামাকাপড় রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়া তৈরি করা হয়েছে সেই সঙ্গে থাকবে অন্যান্য শর্ত, যেমন টক্সিক হেভি মেটালের মতো বিষাক্ত পদার্থ অথবা জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অরগ্যানিজম (জিএমও) ব্যবহার করলে চলবে না; আবার বর্জ্য কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷
অপরদিকে ‘হুমানা’-র মতো বিশ্বব্যাপী সেকেন্ড হ্যান্ড জামাকাপড়ের দোকান আছে, এমন সব সংস্থার কাছে তাদের পন্থাই হলো পরিবেশ ও মানুষের পক্ষে সেরা পন্থা৷ ‘হুমানা’ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য করে থাকে৷ জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় পঞ্চাশ টন জামাকাপড় সংগ্রহ করে হুমানার বিভিন্ন দোকানে পাঠানো হয়, আবার এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন প্রকল্পেও পাঠানো হয়৷ সেকেন্ড হ্যান্ডের সপক্ষে যুক্তি হলো, একটি টি-শার্ট তৈরি পিছনে জল ও তেল সহ মোট চার টন মালমশলা খরচ হয়; সেক্ষেত্রে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড জামা কিংবা কাপড় মেরামত থেকে শুরু করে বণ্টন অবধি মাত্র ত্রিশ গ্রাম রিসোর্স খরচা করে৷
সব মিলিয়ে ফাস্ট ফ্যাশনের হাত থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে গেলে সাধারণভাবে যে পন্থাটি অবলম্বন করতে হবে, সেটি হলো স্লো ফ্যাশন – অর্থাৎ জামাকাপড় যেন বেশি দিন টেকে ও সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে আরো বেশি দিন ব্যবহৃত হয়৷
কৃপ্র/ এম ইসলাম