কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মাছ চাষ করে সফল্ হয়েছেন ভোলা জেলার মোঃ শফিউল্লাহ মাল (৬০)। দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময়ের নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম তাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাতীয় মৎস্য পদক অর্জন করেছেন। তাই জেলায় একজন সফল মৎস্য চাষি হিসাবে তিনি প্রতিষ্ঠিত। প্রতি মাসে এখন তার কয়েক লাখ টাকা আয় হয়।
শফিউল্লাহর বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের দড়িরাম শংকর গ্রামে। ৩ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে সফিউল্লা পঞ্চম। বর্তমানে সে খ্যাতির পাশাপাশি ফিরে পেয়েছেন হারিয়ে যাওয়া আর্থিক স্বচ্ছলতা। সেই সঙ্গে তার এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন প্রায় ১৫ জন মানুষের। তার এই সাফল্য দেখে অনেক বেকার যুবক এগিয়ে এসেছেন মাছ চাষে।
শফিউল্লাহর কাছ থেকে পরামর্শ এবং নানা সহযোগিতা নিয়ে তারাও নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টিরও বেশি মাছের খামার তার পরামর্শে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৯একর জমির ওপর বিশাল ৭টি ঘের নিয়েই শফিউল্লাহর ‘আছিয়া মৎস্য খামার’ এর কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আর এখানে চাষ হয় মূলত কই, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছের। প্রতি ৬মাস পর পর এখান থেকে মাছ বিক্রি করা হয়। পাইকররা তার খামার থেকেই মাছ কিনে নিয়ে যায়। আর সপ্তাহে ১বার করে ঘেরের পানি বদল করা হয় নিজস্ব সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে। তিনি নিজে মাছের খাবারের ডিলার হওয়ায় খাবারেরও কোন ঘাটতি নেই তার এ প্রকল্পে। এছাড়া পুকুরের পাড়ে পেঁেপসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করছেন তিনি।
শফিউল্লাহ জানান, আগে তিনি তার বাড়ি সংলগ্ন জমিতে ধান চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু লাভ না হওয়ায় লোকসানের ঘানি টানতে হয় তাকে। পরে ২০০২ সালে মাত্র ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০ শতাংশ জমিতে মাছ চাষ শুরু করেন। সেবছর তার সামান্য লাভ হয়। কিন্তু এ ব্যবসার প্রতি আকর্ষন বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ গ্রহণ করে তার কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে থাকেন।
তিনি জানান, এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সাফল্য ধরা দিতে থাকে। এলাকার বিভিন্ন সরকারি খাস পুকুর এবং ব্যক্তি পর্যায়ের পুকুর লীজ নিয়ে তিনি তার মাছ চাষের পরিসর বৃদ্ধি করতে থাকেন। শফিউল্লাহ যতেœ গড়ে তোলেন তার প্রতিষ্ঠান ‘আছিয়া মৎস্য খামার’। যা বর্তমানে একটি আদর্শ মৎস্য খামারে রুপ নিয়েছে।
বর্তমানে ভোলা তথা বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার মৎস্য চাষিদের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠান একটি পরিচিত নাম। মৎস্য চাষ থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি। এ বিষয়ের শফিউল্লাহর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকরি নয়, আতœকর্মসংস্থানই একজন মানুষের স্বপ্ন হওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, বিশ্বের সাথে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যে কোন কর্মের পাশাপাশি মৎস্য প্রকল্প তৈরী করা উচিত। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম বাসস’কে জানান, ছোট্ট পরিসরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন শফিউল্লাহ। কিন্তু তার একাগ্রতা ও কর্মনিষ্ঠায় এখন তা ব্যাপকতা লাভ করেছে। এতে তিনি যে শুধু নিজেই আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তাই নয় বরং মাছ চাষে উদ্বৃত্ত হিসেবে পরিচিত ভোলা জেলায় মোট মাছ উৎপাদনের পরিমাণকেও তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সফিউল্লাহ’র মাছ চাষ দেখে এখন অনেকেই এ পেশায় আসতে চায়। এ জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋনের ব্যবস্থারয়েছে।
সুত্রঃ বাসস