কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্রায় সাত হাজার বছর আগেও পাপুয়া নিউ গিনিতে কলা চাষের ইতিহাস পাওয়া যায়। আর এটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৩২৭ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ভারতবর্ষ থেকে ইউরোপে নিয়ে যান। এরপর এটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। প্রায় ৬৫০ সালে এটি আরব যোদ্ধাদের মাধ্যমে এর নামকরণ করা হয় ‘ব্যানান’, যা থেকে পরবর্তীতে ‘ব্যানানা’তে রূপান্তরিত হয়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
ঐতিহাসিক এ কলার ভবিষ্যৎ কোথায়? তা নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ব্যানানা কংগ্রেস ২০১৬-এ কলার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, এমনটাই প্রস্তুতি নেন আয়োজকরা। প্রতিবছর কোস্টারিকার কলা রপ্তানিকারকরা এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এবার কোস্টারিকার সান জোস-এ এবারের সম্মেলনটি হওয়ার কথা ছিল। তবে এ বছরের আন্তর্জাতিক সম্মেলনটির আগেই আয়োজকরা যখন কোস্টারিকায় যান তখন সেখানকার পরিস্থিতি দেখে তারা নিরাশ হন। সেখানে পানামা ডিজিজ নামে একটি রোগের কারণে বেশ স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছিল। আর এর প্রভাব পড়ে এ সম্মেলনেও। আয়োজকরা অভ্যাগতদের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় বিব্রত হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনটির স্থান পরিবর্তন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে করার পরিকল্পনা করা হয়।
এ বিষয়ে ইউনিভার্সিীট অব ফ্লোরিডার প্ল্যান্ট প্যাথলজিস্ট র্যানডি প্লয়েজ বলেন, ”এটি ছিল খুবই আশ্চর্যজনক।” তিনি আরও বলেন, ”আমার মনে হয় এটি প্রমাণ করে তারা কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে।”
মধ্য আমেরিকার কলা উৎপাদনকারীরা সাম্প্রতিক ফাংগাসের আক্রমণে অত্যন্ত মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা যেকোনো উপায়ে এ ফাংগাস থেকে রক্ষা পেতে চাইছেন। কারণ ফাংগাসটি দূর করতে না পারলে তা সম্পূর্ণ কলা শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কলা উৎপাদন হয় যে দেশগুলোতে তাদের মাঝে কোস্টারিকা উল্লেখযোগ্য। তারা সারা বিশ্বে কলা রপ্তানি করতে যে সমস্যার মুখোমুখি হয় তা নিয়েই এবারের সম্মেলনে আলোচনা হবে। আলোচ্যসূচিতে থাকবে কলার নানা রোগবালাই, আন্তর্জাতিক কলার বাণিজ্য ও রপ্তানিতে নানা প্রতিবন্ধকতা।
পানামা ডিজিজ কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে সম্প্রতি এ রোগটি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ পার হয়ে শেষ পর্যন্ত আমেরিকায় পৌঁছেছে।
কলার ভবিষ্যৎ কোথায়? এ প্রশ্নে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন উত্তর দেবেন। কলা ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে রোগমুক্ত চারা উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জেনেটিক্যালি মডিফায়েড কলার জাত তৈরি করার চিন্তাভাবনাও চলছে, যে কলার গাছ কোনো রোগ থেকে মুক্ত থাকবে। তবে নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা ফাংগাসের জেনেটিক কোড উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছেন। এতে কলা নয় বরং ফাংগাসকেই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কার্যকর হবে বলে মনে করছেন তারা। এ ছাড়া হাইব্রিড কলার জাত নিয়েও কাজ করা হচ্ছে, যে গাছগুলো কলা খামারিদের উচ্চ ফলন দেবে। তবে এসব নানা প্রযুক্তির ভিড়ে প্রাকৃতিক কলা আর বাজারে পাওয়া যাবে কি না, তাই এখন প্রশ্ন।