কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আমাদের দেশে ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে প্রধানত বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম একটি আধুনিক ধারণা। এ পদ্ধতিতে কীটনাশক ছাড়া অন্যান্য অনেক পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষ করে আলোক ফাঁদ ও ক্ষেতে ডাল পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করে অনেক পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
আলোক ফাঁদ প্রকৃত অর্থে ফসলে পোকার উপস্থিতি যাচাই বা মনিটরিংয়ের একটি যন্ত্রবিশেষ। কিন্তু এটা দিয়ে শুধু পোকার উপস্থিতি যাচাই না করে ক্ষেতের পাশে নিয়মিতভাবে পেতে রেখে অনেক পোকা আলোতে আকৃষ্ট করে মারা যায়। আলোক ফাঁদ এ আমাদের দেশে বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাচীনকালে ক্ষেতের ধারে রাতে মশাল জ্বেলে বানর ও বুনো শূকরের মতো ফসল-অনিষ্টকারী জীবজন্তুকে ভয় দেখানো হতো। এতে ফসল-অনিষ্টকারী পোকাও মারা পড়ত।
সৌর আলোক ফাঁদ: এই যন্ত্রে নানা রকমের কৌশল অবলম্বন করে শিকার ধরা বা আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়। বেশ কিছু পোকা আছে যারা আলোতে আকৃষ্ট হয়। তাই আলোক ব্যবহার করে আলো-আকর্ষী এসব পোকা আটকানোর বা আকৃষ্ট করে মেরে ফেলার জন্য যে ফাঁদ তৈরি করা হয় তাকেই আলোকফাঁদ বলে।
আলোক ফাঁদ মূলত একটি মনিটরিং যন্ত্র, যা দিয়ে ক্ষেতে কী কী পোকা আছে তা দেখা যায়। আলোকফাঁদ দ্বারা অনেক ধরনের পোকামাকড়ের উপস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে জরিপ করা যায়। বিশেষত ফসলের যেসব পোকা আলোতে আকৃষ্ট হয় তা ক্ষেতের কাছে আলোকফাঁদ পাতলে তাতে আকৃষ্ট হয় এবং মারা পড়ে। অনেক নিশাচর প্রকৃতির পোকাও আলোকফাঁদে ধরা পড়ে। তবে আলোর গুণাগুণের ওপর ফাঁদের কার্যকারিতা নির্ভর করে।
ফ্লোরোসেন্ট বা তীব্র আলোর ফাঁদে বেশি পোকা আসে। ২০ ওয়াটের সৌর বৈদ্যতের বাতি দিয়ে ভালোভাবে পোকা দমন করা যায়। তবে কেরোসিন বাতি বা হারিকেনের আলোয় পোকা আসে সবচেয়ে কম। এমনকি টায়ার পুড়িয়ে বা মশাল জ্বেলেও অনেক পোকা দমন করা যায়, যেমন ধানের গান্ধী পোকা। এসব ফাঁদ তৈরি ও ব্যবহার অত্যন্ত সহজ হওয়ায় দিনে দিনে তা কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পোকা নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতি সস্তা ও পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমন ধানের ক্ষেতে ব্যাপকভাবে সারা ফেলেছে আলোকফাঁদ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম