কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : বাংলাদেশে ২০১৬-১৭ বিপণন বর্ষে চাল উৎপাদন হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের ফরেন এগ্রিকালচার সার্ভিসেস (এফএএস)। এবার বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন চাল উৎপাদন কমলেও বাড়তির দিকে থাকবে শীতকালীন পণ্যটির ফলন। মূলত অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন চালের পরিবর্তে অন্যান্য শস্যের আবাদ বাড়াচ্ছেন; যার কারণে চলতি বিপণন বর্ষে চালের সার্বিক উৎপাদন থাকবে কমতির দিকে। খবর ওয়ার্ল্ড গ্রেইন ডটকম।
এফএএস সাম্প্রতি ২০১৬-১৭ বিপণন বর্ষে বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার টন নির্ধারণ করেছে। আর এ পরিমাণ চাল উৎপাদনের জন্য ১ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হতে পারে। ২০১৬-১৭ বিপণন বর্ষে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন চাল উৎপাদন ২৪ লাখ টন কমতে পরে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অপর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থার কারণে প্রাথমিক পূর্বাভাসের বিপরীতে ধান আবাদে জমির পরিমাণ কমবে।
মাঠ পর্যায়ের সূত্রমতে, বাংলাদেশের অনেক কৃষক অধিক লাভজনক হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন চাল উৎপাদনের পরিবর্তে পাট, ভুট্টা ও শাক-সবজি আবাদে ঝুঁকছেন। বাংলাদেশ সরকার পাঁচটি কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ঘোষণার পর পাটের চাহিদা বেড়েছে। ভালো বাজারদরের কারণে কৃষকরা পাট আবাদ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, যা গ্রীষ্মকালীন চালের চেয়ে বেশি লাভজনক হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এদিকে ২০১৬-১৭ বিপণন বর্ষে বাংলাদেশে ১ কোটি ৮৮ লাখ টন শীতকালীন চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে এফএএস।
অন্যদিকে আগস্ট থেকে শুরু হওয়া চলতি বিপণন বর্ষে বাংলাদেশে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টন গম উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে এফএএস। তবে চলতি বিপণন বর্ষে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি আমদানিও থাকবে নিম্নমুখী। ২০১৬-১৭ বিপণন বর্ষে বাংলাদেশ ১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। কঠোর আমদানি সুরক্ষা নীতির প্রভাবে বাংলাদেশে চাল আমদানি কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের ২ জুন বাংলাদেশ সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। এছাড়া বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং ৪ শতাংশ অতিরিক্ত আগাম বাণিজ্য কর (এটিভি) আরোপিত আছে। বাংলাদেশ সাধারণত সস্তায় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চাল আমদানি করে থাকে। শুল্ক বৃদ্ধি এবং অন্যান্য ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ায় দেশটি থেকে পণ্যটির আমদানি কমবে বলে ধারণা করছে এফএএস।
২০১৫-১৬ বিপণন বর্ষেও বাংলাদেশের চাল আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। বাংলাদেশের কাস্টমসের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এফএএস জানায়, গত বিপণন বর্ষে ২ লাখ ২০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছিল। এদিকে ২০১৬-১৭ বিপণন বর্ষে বাংলাদেশ ৪৪ লাখ টন গম আমদানি করতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দামে নিম্নমুখিতা আমদানি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। গত বিপণন বর্ষে বাংলাদেশ ৪২ লাখ টন গম আমদানি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ গম আমদানি এবং চালকলের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। এছাড়া সাধারণ চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সুগন্ধি চাল রফতানির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে এফএএস জানিয়েছে।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম