কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নে বিলনেপাল পাড়ায় এলাকার বিল-জলাভূমি রক্ষাসহ পরিবেশিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে গতকাল বুধবার এক গণমাধ্যম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও স্থানীয় কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষক, জেলে,দিনমজুর, এনজিওর কর্মকর্তাসহ নানা পেশার নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারী বলেন, পবা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্ণাহার বড় বিলে শত শত বিঘা জমিতে কৃত্রিম পুকুর খনন করার ফলে বিলের পরিবেশ দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে স্থানীয় বিল কেন্দ্রিক পেশার মানুষগুলো হয়েছে পেশাহীন। প্রভাবশালীরা বিলে শতশতবিঘা পুকুর খনন করে হাজার হাজার মন মৎস উৎপাদন করছে । পুকুরে মাছ চাষের কারনে সেখানকার খেটে খাওয়া মানুষগুলোও হয়েছে পেশাহীন ।
যারা প্রতিনিয়ত বিলে কখনো হাল চাষ, শস্য ফসল রোপন ও কর্তন এবং মৎস শিকার করে জিবিকা নির্বাহ করতো তারা পড়েছে মহা সংকটে। কৃষক সামসু উদ্দিনের (৫৫)বলেন-“ যেটুকু জমি আছে বিলে পুকুড় খনন করার কারনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে । বাধ্য হয়ে আবার তাদের কাছে সে জমি লিজ দিতে হচ্ছে, আর সে জমি নিয়ে দরিয়া (পুকুড়) বানাচ্ছে। জানি না এই জমি আবার কথনো পাবো কি না। এখন সরাবছর আর চালের যোগান হয়না , কিনে খেতে হয় ।” দর্শনপাড়ার মৎসজিবি আশরাফ মিয়ে (৫০)বলেন- আমাদের দিকে কে দেখবে, সব বিলে এখন পুকুর খনন করেছে, খাড়ি গুলোও লিজ দিয়েছে , আমারা আর কোথায় মাছ শিকার করবো। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় কাজ করতে যাই । এতে অনেক কষ্ট হয়। কারন আমারা আগে থেকেই মাছ শিকারের সাথে জড়িত ।”
সংলাপে মাঠ পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় সচেতন নাগরিক গোষ্ঠীর মতামতের আলোকে বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন-“ জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক অভিঘাত ও উন্নয়ন দুর্যোগের কারনে বরেন্দ্র অঞ্চলটি বর্তমান পানি সংকট এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । আবার চলমান সময়ে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ এবং মানুষের মতামত থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিল জলাভূমি নষ্ট করার ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে আরেকটি ভয়াবহ দুর্যোগ হতে যাচ্ছে । প্রাকৃতিক বিল ও জলাভূমি বৈচিত্র্য নষ্ট হবার ফলে বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের মধ্যে পড়বে, অনেক প্রাণসহ মানুষের জীবিকা সংকটে পড়বে, একই সাথে এই অঞ্চলের পরিবেশ প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। আর এ সম্পর্কে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ না করলে আগামীতে পানি সংকটের মতো আরেকটি দুর্যোগের স্বীকার হতে হবে আমাদের।
সমাজ সেবক মোঃ নুরুল আমিন বলেন- কৃত্রিমভাবে খনন করা পুকুরগুলোতে এখন রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মাছ চাষ হয়, যা আমদের স্বাস্থ্যের জন্যেও হুমকি। কিছু খাড়িতে লিজ নিয়ে বা জোড় করেই প্রভাবশালীরা মৎস চাষ করে । বিল ও জলে সাধারন মানুষের আর অধিকার নেই ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম /তাহেরা ইসলাম