কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার বনভূমির ১০ হাজার একর জমিই উৎকৃষ্টমানের চা চাষের জন্য উপযোগী। প্রয়োজন শুধু চা বোর্ডের ঘোষণা ও উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ। আরো সম্ভাবনার বিষয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় চা বোর্ডও বলছে, আগ্রহীগণ উদ্যোগ নিলেই চা বোর্ড সব ধরনের সাহায্যে এগিয়ে তারা আসবে।
এক সময় চা রপ্তানি করে আমাদের দেশ অর্জন করেছে অনেক সুখ্যাতি। দেশের অভ্যন্তরেই চায়ের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য এখন সেই রপ্তানির মাত্রা কমিয়ে উল্টো আমদানি করতে হচ্ছে চা। আর চা বাগানের কথা উঠলেই এক সময় শুধু সিলেটের কথাই আসতো। কিন্তু এখন চা-এর সঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সম্পৃক্ততা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ফটিকছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এলাকায় চা উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মীরসরাই উপজেলার পার্শ্ববর্তী রামগড় ও ফটিকছড়িতেও চা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে চা চাষের অনুকূল উজ্জ্বল সম্ভাবনা সত্ত্বেও এখানে শুধু উদ্যোগের অভাবেই শুরু হচ্ছে না চা চাষ।
অপরদিকে এই পাহাড়ি অঞ্চল রাবার চাষের জন্যও যথেষ্ট উপযোগী। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৩ সালে এই পাহাড়ি জোনে দাঁতমারা থেকে একটি রাবার বাগান উদ্যোক্তা পর্যবেক্ষক টিম এসেছিল। এখানে যথেষ্ট পরিমাণে সম্ভাবনা দেখে বনশিল্প করপোরেশনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। আবার বনবিভাগে জমি পাহাড়ি জোন বরাদ্দ পাবার প্রস্তাবনা দেয়া আছে। কিন্তু প্রক্রিয়া আর বেশি দূর এগোয়নি।
এই বিষয়ে দাঁতমারা রাবার বাগান এর ডিজিএম তারেক মো. আজাদ জানান, বনবিভাগ আমাদের জন্য ভালো এলাকার কিছু সীমানা নির্ধারণ করে দিলে আমরা রাবার চাষের উদ্যোগ নিতে পারি।
মীরসরাই উপজেলার পার্শ্ববর্তী রামগড় চা বাগানটি স্থাপিত হয় ১৯১৫ সালে। পরবর্তীতে এর আশপাশেই পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠে দাঁতমারা, নেপচুন, আঁধারমানিকসহ অনেক চা বাগান। উক্ত চা বাগানসমূহ বিভিন্ন আয়তনের।
সময়ের বিবর্তনে বনভূমি বিলীন হতে হতে এখন বর্ষা মৌসুমে এখানে আংশিক সবুজ দেখা গেলেও শুষ্ক মৌসুমে ন্যাড়া পাহাড়গুলোকে ধূসর খাঁ খাঁ মনে হয়। যেন দিনে দিনে মরুভূমির রূপ লাভ করছে। কিন্তু চা বাগান গড়ে উঠলে এই জোনের বনভূমি যেন ফিরে পাবে নতুন প্রাণ। পাশাপাশি ফিরে আসবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সবুজ এর অলঙ্করণ।
রামগড় চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার অতীশ সেন গুপ্তের কাছে তার বাগানের উৎপাদন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেডরোলোর মালিকানায় ১৩৭৬ একর বাগানে বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ৬ লাখ কেজি চা। কয়েক শত শ্রমিক কাজ করে তার বাগানে। তিনি বলেন, চা বাগান সৃজনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য ও একাগ্রতা। লাগানোর ৪-৬ বছর কোনো আয়ের চিন্তা না করে শুধু বিনিয়োগ করে যেতে হয়। চারা থেকে গাছ চা ফলনের উপযোগী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাও এক প্রকার বিনিয়োগ।
মীরসরাই উপজেলা অঞ্চলের চা চাষের সম্ভাব্যতা বিষয়ে সিলেটের চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিজ্ঞানী শেফালী ব্যানার্জির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মীরসরাই অঞ্চল চা চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। আর চট্টগ্রাম চা বোর্ডে এসব অঞ্চলে চা চাষ বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাবনাও দেয়া আছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় চা বোর্ডের উপ-পরিচালক পরিকল্পনা মনির আহমেদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মীরসরাই-সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো অবাধে চা চাষের উপযোগী। এখানকার মাটি ও পরিবেশ অনুকূল। তবে বিভিন্ন পর্যায়ের বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তা এগিয়ে এলে আমরা অবশিষ্ট সব সহযোগিতা দেব।
এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান, মীরসরাইয়ের পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক রাবার ও চা-এর আবাদ করা সম্ভব। সরকার উদ্যোগ নিলে উদ্যোক্তাদের জন্য চাষাবাদ ও সকল পর্যায়ে কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের ১৬২টি বাগানের ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ২০১৫ সালে ৬৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এখন প্রতি বছর আনুমানিক ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রপ্তানি হয়। কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, পোল্যান্ড, রাশিয়া, ইরান, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, কুয়েত, ওমান, সুদান, সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের চা।
গত দশ বছরে পৃথিবীতে চায়ের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম