কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি প্রহসনে রূপ নিয়েছে সাভারে অবস্থিত জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রকল্পের নামে অর্থায়ন না থাকায় কর্তাব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব বিকিয়ে দিতে বসেছেন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির মূল অফিস ভবন ও স্পন ল্যাবরেটরির কাছের বিশাল ফটকটির সামনের অংশ পরিবহন ব্যবসায়ীদের চারটি কাউন্টার অফিস বানানোর জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন উপপরিচালক। খবর নয়াদিগন্ত অনলাইন।
জানা যায়, এর জন্য তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম নেয়া হয়েছে এবং প্রতি মাসে প্রতিটি কাউন্টার থেকে তিন হাজার টাকা করে ভাড়া পাবেন। এ ছাড়া তিনি ও তার পরিবার বিনা ভাড়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত সুবিধা পাবেন বলে জানা গেছে।
প্রকল্প না থাকায় মাশরুম চাষিদের প্রতিষ্ঠান মাশরুম ফাউন্ডেশনেরও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষটি ভাড়া দেয়া হয়েছে হার্বস ওয়ার্ল্ড নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে।
ফাউন্ডেশনের দক্ষিণে অবস্থিত বিশাল কক্ষটি সাভারের সিটি সেন্টারের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের গুদাম হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
গত বছরের জুনে প্রতিষ্ঠানটি কর্মসূচি প্রকল্পের দুই বছর শেষ করেছে। জুলাই মাসে নাটকীয়ভাবে ল্যাবের এক লাখ টাকার একটি ক্যামেরা চুরি হয়ে যায় বলে গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে লুটপাটের সূচনা হয়েছে।
মাশরুম গবেষণার নামে ক্রয়কৃত বিভিন্ন রাসায়নিক এবং মালামাল হাটখোলা ও মিটফোর্ডে পুনরায় বিক্রি করা হচ্ছে। দিনে প্রতিষ্ঠানটিতে তেমন কাজ না থাকলেও উপপরিচালক এবং একজন মাশরুম বিশেষজ্ঞ রাত ১০টা পর্যন্ত ‘ভাগবাটোয়ারা’র কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিষ্ঠানটির কাজের লোক অফিসারদের বাসায় কাজ করছে, প্রতিষ্ঠানের দ্রব্যাদি অফিসারদের অনেকের বাসায় চলে গেছে। এসব প্রয়োজনে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আর ফিরে আসেনি। অনেক ক্ষেত্রে মেরামত করতে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখান থেকে নাকি অফিসারদের বাসায় চলে যায়। গ্যাসের সিলিন্ডার-চুলা, স্ট্যান্ড-ফ্যান, টিভি, আলমারি, ফ্রিজ, এসি, ওভেন, ব্লেন্ডার, এমনকি চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত বাসায় চলে যাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই!
উদ্যোক্তাদের অভিযোগ মাশরুমের মাতৃবীজ বিক্রিতেও ব্যবসায় করছে প্রতিষ্ঠানটি। মাশরুমের মাতৃবীজ বা মাদার কালচারের প্রতিটির মূল্য ১৫ টাকা। কিন্তু উদ্যোক্তারা এই দামে আর এটি সংগ্রহ করতে পারছেন না। তাদের বলা হচ্ছে, ‘মাশরুমের মাদার নেই’। অথচ প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা উৎপাদিত মাদার কালচার তার মদদপুষ্ট কর্মচারীর বাসায় সংরক্ষণ করছেন এবং মাশরুম উদ্যোক্তাদের কাছে ওইসব কর্মচারীর মাধ্যমে ৩০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
বিভিন্ন জায়গার মাশরুম উদ্যোক্তাদের নাজেহাল অবস্থাটি স্বীকার করেন কুমিল্লার সাত্তার, খুলনার ফারুক, চট্টগ্রামের নাসির, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরের জসিম এবং ফরিদপুরের মাহবুব।
প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ল্যাবের দায়িত্বে আছেন ড. আখতার জাহান কাঁকন। ল্যাবের মালামাল বেহাল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছুই অবগত নই।’ মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকারকে প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছরের ব্যবহৃত বিশাল ফটকটি বন্ধ করে পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে কত লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
জাতীয় মাশরুমের নতুন প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য আন্দোলনকারী জনপ্রিয় লোকশিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া বলেন, প্রকল্পের জন্য আন্দোলনে ছিলাম, প্রকল্পের জন্য সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। ভাগ্যিস প্রকল্প আসেনি! এখন আপনারাই বলুন- প্রকল্প পাস হলে কী অনর্থই না ঘটত।
কৃপ্র/ এম ইসলাম